মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুরে বন্যা খাতুন (১৮) নামে এক তরুণীর প্রেমের জেরে সাজানো অপহরণ মামলায় তছনছ করে দিয়েছে পাঁচটি পরিবারের স্বাভাবিক জীবন। সে উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিয়াড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে বালিয়াকান্দি উপজেলার কোনা গ্রামের রাকিব মণ্ডলের সাথে প্রেম টানে দুইবার পালিয়ে যায়। এ কারণে বন্যার পিতা-মাতা বাদি হয়ে শ্রীপুর থানায় এবং দ্বিতীয় বার মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মিথ্যা অপহরণ মামলা করছে। আর এই মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে পাঁচটি পরিবার এখন অসহায় জীবন-যাপন করছে। সেই সাথে প্রশাসন অসহায় হয়ে পরেছে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েও প্রেমিক যুগোলকে আটক করতে পারছেনা পুলিশ।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন এবছর পেঁয়াজের মৌসুমে হাট থেকে কামলা (দিনমজুর) রাকিব মন্ডলসহ আরো কয়েকজনকে বাড়িতে নিয়ে আসে। রাকিব মন্ডল আনোয়ারের বাড়িতে থাকার সুবাদে তার মেয়ে বন্যার সাথে প্রেমে জড়িয়ে গত ১৮ জানুয়ারি দুজন পালিয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারি রাজবাড়ি জেলা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এ ঘটনায় বন্যার মা শিরিনা বেগম ১ ফেব্রুয়ারি রাকিব মন্ডলকে ১নং ও তার সহযোগী হিসেবে শাকিল ও মারুকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় একটি মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করেন । ওই মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় রাকিবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং বন্যাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। জেল থেকে বের হয়ে রাকিব-বন্যা আবারো প্রেমের টানে গত ১৩ জুলাই তারা দুজনে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমায়। আর রাকিবের পিতা-মাতা পরিবার নিয়ে নিজের বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়েছে নিজ গ্রাম থেকে।
বন্যার পিতা আনোয়ার হোসেন মেয়ে দিনমজুর রাকিবের সঙ্গে পালিয়েছে নিশ্চিত যেনেও জুলাই মাসের ১৪ তারিখে ৫ জনকে আসামি করে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মিথ্যা অপহরণ মামলা করেছে। এ মামলার প্রধান আসামি রাকিব ছাড়াও রয়েছেন মনিরুজ্জামান, টিটুল, রবিউল ও সুজাত। এদের ৪ জনের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় হলেও শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের মনিরুজ্জামান নামে একজনকে আক্রোশমূলক ওই মামলার মিথ্যা আসামি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বন্যার পিতা-মাতার কার্যকালাপে সমালোচনার বয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
অপহরণ মামলার দ্বিতীয় আসামি মনিরুজ্জামান বলেন, বিগত ফেব্রুয়ারিতে বন্যার মা শিরিনা বেগম আমার ক্রোকারিজ দোকান থেকে কিছু প্লাস্টিক সামগ্রী কিনতে আসে। এসময় শিরিনা বেগম কিছু টাকা বাকি চাই, আমি নতুন দোকানদার হিসেবে বাকি দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। তখন শিরিনা বেগম আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এক পর্যায়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
তথ্য সূত্রে দেখা গেছে, মনিরুজ্জামান প্রথমবার জানুয়ারিতে বন্যা যখন পালিয়ে যায় তখন সেই মামলায় আসামি ছিলাম না। কিন্তু ছয় মাস পর অন্যের প্ররোচনায় প্রতিহিংসামূলক মনিরুজ্জামানকে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
স্থানীয় জনগণ এবং কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ঘাসিয়াড়া ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, মেয়ে প্রেমে পড়ে পালালো বাড়িতে আনা পেঁয়াজ খেতের কামলার সাথে। সব কিছু জেনেও আনোয়ার ও তার স্ত্রী বরাবর অপহরণ মামলা দিচ্ছেন। আর পুলিশও বারবারই খুঁজে এনে দিচ্ছেন।
এ মামলায় ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামানের ভাই হাছিবুল ইসলাম কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব খানের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, আমার ছোট ভাই বন্যা অপহরণ মামলার আসামি না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি দ্বিতীয় বার আবার বন্যা রাকিবের সাথে পালালে মনিরুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে। যা কি না সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এ মামলায় তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
এদিকে বন্যা ও তার মামার অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ায় ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। অডিও রেকর্ডে তার ইচ্ছাকৃত আত্নগোপন ও মুনিরুজ্জামানকে ফাঁসানোর বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বন্যার পিতা আনোয়ার হোসেন ও মা শিরিনা বেগমের সাথে কথা বলতে তাদের বাড়িতে গেলে তারা বলে আপনারা কেন আসছেন? সাংবাদিকদের সাথে আমাদের কোন কথা নেই।
মাগুরা শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার জানান, এ বিষয়ে একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। বারবার স্থান ত্যাগ করা এবং মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করায় রাকিব মন্ডল ও বন্যাকে খোঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।