বিশেষ প্রতিবেদক-
”বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শেখ হাসিনার অবদান বিনামূল্যে লিগ্যাল এইডে আইনি
সেবা দান” এই প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে গতকাল বিকালে মাগুরা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে মাগুরা বিচার বিভাগের বিজ্ঞ বিচারক, বিজ্ঞ আইনজীবী এবং সহযোগী কর্মচারীদের নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারের মূল বিষয় ছিল ‘ আইনগত সহায়তা সেবার মান উন্নয়নে এবং ফলপ্রসূকরণে বিচারক এবং সহযোগী কর্মচারীদের ভুমিকা’। সেমিনারে কী-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সম্মানিত চেয়ারম্যান এবং বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো: কামরুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন,“ আইনগত সহায়তার ধারণা আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এবং সহযোগী কর্মচারীদের মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। বর্তমান সরকার সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত, অসহায় এবং অসচ্ছল মানুষকে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রনয়ণ করেন। এই আইনের অধীনে সরকার কতিপয় বিধিমালা, নীতিমালা ও প্রবিধানমালা প্রনয়ণ করেছেন। যার ফলে এখন আইনগত সহায়তার বিস্তার শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মানুষের সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
”বাংলাদেশের কোন কোন ধরনের নাগরিক আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য সে বিষয়ে কি-নোট স্পিকার বলেন,“ যদিও ২০০০ সালের আইনের অধীনে প্রণীত আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা- ২০১৪’ বিশেষ কিছু নাগরিকদের আইনগত সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তবু বর্তমান সরকার এই সুবিধা উদারভাবে প্রয়োগের নির্দেশনা প্রদান করেন।”
আলোচনার এক পর্যায়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক আইনগত সহায়তার মেসেজ প্রান্তিক জনগোষ্ঠি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের বিচারক এবং সহযোগী কর্মচারীদের আইনগত দায়িত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন,“ আজকের সেমিনারের বক্তব্য শুধু নিজেরা শুনে চলে গেলেই হবে না কথাগুলো নিজেদের পরিবার, প্রতিবেশি এবং
সমাজের জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। আইনজীবীগণের সাথে একত্রিত হয়ে প্রি-কেইস এবং পোস্ট কেইস উভয় ক্ষেত্রে আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার জন্য বিচারক এবং সহযোগী কর্মচারীদের অংশগ্রহণ করা এখন শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়; এটা এখন আইনি বাধ্যবাধকতা।” জমি-জমার বিরোধ থেকে শুরু করে যে কোন পারিবারিক বা ফৌজদারী অপরাধের সাথে জড়িত নিরপরাধ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির নাগরিকদের আইনগত সহায়তার আওতায় এনে বিচার বিভাগের উপর সাধারন নাগরিকদের আস্থা আরোও
বৃদ্ধির তাগিদ দেন মূল আলোচক।
এছাড়া সেমিানারে তিনজন আলোচক ছিলেন। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জনাব ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি নির্ধারিত আলোচনায় বলেন, “আইনগত সহায়তা পাওয়া নিশ্চিতকরণে এবং ফলপ্রসূকরণে বিচারাঙ্গণে সহযোগী কর্মচারীদের বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। যেসব মামলা বা মোকদ্দমা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আদালতে প্রেরণ করা হয় সেসব মামলা বা মোকদ্দমার সাথে সংশ্লিষ্ট বিচারপ্রার্থী বিশেষ করে নারীদের-শিশুদের প্রতি অধিকতর সদাচরণ করার প্রয়োজন রয়েছে। সাধারন মানুষ যেন এমন আস্থা অর্জন করেন যে, আদালতে তাদের জন্য নিরাপদ একটা স্থান আছে। নারীরা যেন আদালতে এসে তাদের শিশুদের নিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার নিধারিত স্থানে যেতে পারেন সে বিষয়েও কর্মচারীদের দায়িত্ব রয়েছে। লিগ্যাল এইড অফিস থেকে সরকারি খরচে যেসব মামলা করে পাঠানো হয়
সেসব মামলা বিষয়ে কর্মচারীগণ বিশেষ কেয়ার নেবেন।”
অপর আলোচক বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব এম. জাহিদ হাসান ‘আইনগত সহায়তার বিস্তারে বিচারকগণের ভূমিকা’ শীর্ষক নিবন্ধে বলেন,“ বিচারকগণ একটু তৎপর হলে অহেতুক মামলা ঠেকানো সম্ভব। যখন কোন নিয়মিত মামলা হয়ে যায় তখন বিচারকগণ একটু মনোযোগ দিলেই বোঝা যায় যে ঐ নির্দিষ্ট বিরোধ আপোষে নিষ্পত্তি সম্ভব। তখন ঐ মামলা মোকদ্দমা লিগ্যাল এইড অফিসে প্রেরণ করা উচিত। লিগ্যাল এইড অফিসারের কার্যাবলী কোন আলঙ্কারিক পোস্ট নয়। বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে পারলে সমাজের অসহায় মানুষজনকে এখনও গতানুগতিক বিচার ব্যবস্থার ত্রæটি পাঁশ
কাঁটিয়ে নাগরিকদের ন্যয়বিচার দেওয়া সম্ভব।”
ঝিনাইদহ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক ( জেলা ও দায়রা জজ) জনাব প্রণয় কুমার দাস ‘আইনগত সহায়তা ধারনার আধুনিক উন্নয়ন’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলোচনায় উল্লেখ করেন কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রসমূহ আইনগত সহায়তা নিজেদের আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এক্ষেত্রে তিনি ১৯৬৬ সালের আইসিসিপিআর এর উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থানের কারণে আজ আইনগত সহায়তার ধারনা এত ব্যাপকতা পেয়েছে। তিনি বলেন,“ আইনগত সহায়তার ধারণা মোটেই নতুন কোন শব্দবন্ধ নয়। এটা আন্তর্জাতিক আইনের এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি রয়েছে। আর আইনগত সহায়তা প্রদান করার বিধি বিধান সম্পর্কে বিচারকগণের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। উক্ত সেমিনারে উপস্থাপনা করেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা (সহকারি জজ) মোঃ ফরিদুজ্জামান। মাগুরা সদবিচার বিভাগের বিচারক এবং কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এই সেমিনারের শেষ দিকে প্রশ্নোত্তর পর্বে আয়োজন করা হয়। সেখানে সবাই প্রশ্ন করেন। লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা এবং কমিটির সম্মানিত চেয়ারম্যান উত্তর প্রদান করেন। সেখানে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার দ্বারা আপোষ হলে আদালতে সেটা সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহারের আইনগত ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ৫০ জনের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সেমিনারে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাগুরা প্রতিনিধি জনাব এডভোকেট মনিরুল ইসলাম সিদ্দিকী র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রায় তিনঘন্টা ধরে চলা এই সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যার এবং জেলা ও দায়রা জজ জনাব মোঃ কামরুল হাসান।