মাগুরানিউজ.কম: বিশেষ প্রতিবেদকঃ
‘আপনারা আমাদের বাঁচান’ আমাদের সব শেষ হয়ে গেল নদীর ভাঙনে, আমরা ত্রাণ চাই না, নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা চাই। এমন আকুতি মহম্মদপুরের মধুমতি নদীপারের মানুষদের। গত তিন দিনে মধুমতি নদীর পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একই সঙ্গে নদীপারের মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
মধুমতির ভাঙনে মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে মহেশপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি, রায়পুর, রুইজানি ও ভোলানাথপুর গ্রাম। গত মঙ্গলবার থেকে এ পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৩৫ পরিবারের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাটসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। এ পর্যন্ত উপজেলার ৬টি গ্রামের ৭-৮ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছে নদীতীরবর্তী রুইজানি, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, মহেশপুর ও হরেকৃষ্ণপুর এলাকার মানুষ। ভাঙন রোধে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ সাপেক্ষে হরেকৃষ্ণপুর থেকে ঝামা পর্যন্ত ৩শ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেললেও স্রোতের তীব্রতায় ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
গত শুক্রবার দুপুরে বসুরধুলজুড়ী, ভোলানাথপুর ও রুইজানী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সর্বস্ব হারানো অসহায় নারী-পুরুষের আহাজারি। কেউ কেউ ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘরবাড়ি ও গাছপালা সরিয়ে নিচ্ছেন। গত তিন দিনে নদীতে বাড়ি হারিয়েছেন ওই এলাকার নিখিল সরকার, পূর্ণ সরকার, হরষিত সরকার, দশরথ সরকার, সুশান্ত রায়, নারায়ণ চৌধুরী, তারাপদ চৌধুরী, রতন চৌধুরী, প্রিয়নাথ চৌধুরী, জগা মালাকার, অসিম রায়, দুলাল মন্ডল, দীপংকর চৌধুরী, কুমুদ মাস্টার, মনি মোহন চৌধুরী, প্রতুল চৌধুরী, পান্না মিয়া, এনামুল হক, আবদুল্লাহ, ওহিদুল্লাহ, আলতাব মোল্যা, মোতালেব মোল্যা, আবুতালেব, বাশার মোল্যা, নুরু মাস্টার, হালাকু খান, সুলতান মোল্যা, ফারুক খান, সন্তোষ বিশ্বাস, মহেন্দ্র বিশ্বাস, শচীন বিশ্বাস, উৎপল বিশ্বাসসহ অসংখ্য মানুষ।
এরই মধ্যে নদীপার থেকে বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন আড়মাঝি গ্রামের আল আমিন, আলী আফজাল, আতিয়ার রহমান, ইমদাদুল, ফসিয়ার, কায়েম, ওহিদ মিয়া এবং কাশীপুর গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল রোকন উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, পান্নু বিশ্বাস, বাচ্চু মোল্যা, মাজেদ মোল্লা, ওহাব মিয়া, আবু মিয়া, সাবু মিয়া, মাজেদ মেম্বার, হাসেম মোল্লা, মতিয়ার মিয়াসহ আরো অনেকে।
এ বিষয়ে মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার বলেন, ‘ইতোমধ্যে ২৫ কোটি টাকার নদীশাসন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। কাশিপুর অঞ্চলে দুবারে ৮ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হবে। চলমান নদীভাঙন রোধে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন সুজন বলেন, নদীভাঙন রোধে আমরা কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই শেষ করেছি। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করতে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করব।