নিউজ ডেস্ক-
আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র রূপ পাবে উল্লেখ করে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন রুখতে বিএনপি-জামায়াত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে ভোট চাইলে তারা দুই হাত তুলে সমস্বরে নৌকার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান। সমাবেশের আগে তিনি দুই হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে সমাপ্ত ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বাকি পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
যেগুলোকে তিনি খুলনাবাসীর জন্য তাঁর উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দিনে নির্বাচনের সময় একটি বিষয় সবাইকে নজর রাখতে হবে, বিএনপি জানে যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল এবং তাদের নেতা নেই, মুণ্ডুহীন একটি দল। সেই দল এ দেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এভাবে গাড়িতে আগুন আর মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত সেই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।
আর উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন, যাতে এ দেশের মানুষের কোনো ক্ষতি করতে আর কেউ সাহস না পায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি সেই পোড়া মানুষগুলোর দুরবস্থা। চোখে পানি রাখা যায় না। ওদের (বিএনপি) মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ নেই। কিভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। ওই ধরনের ঘটনা যাতে আর ঘটাতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা, আপনারা মানুষের নিরাপত্তা দেবেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আপনারা নিরাপত্তা দেবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াত জোট, তারা মানুষের জন্য কাজ করে না। একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে এখন কারাগারে। আর একজন মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে বসে দুর্নীতির টাকা দিয়ে চলছে। আর এখানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।’
ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরায়েল যেভাবে হাসপাতালে হামলা করেছে, বিএনপিও একই কায়দায় হাসপাতালে হামলা করেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বিএনপিরা ইসরায়েলের কাছ থেকে মনে হয় শিক্ষা নিয়েছি। তাহলে এরা কারা? এরা কি বাংলাদেশ চায়? নাকি ধ্বংস চায়? ওরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।’
বক্তব্যের এক পর্যায়ে বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত পোশাককর্মীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কোন সরকার তাদের বেতন বাড়িয়েছে? তিনি বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ তাদের বেতন বাড়ায়নি। বিএনপির সময়ে যে বেতন ছিল ৮০০ টাকা, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তা এক হাজার ৬০০ টাকা করেছিল। এরপর কয়েক দফায় তা বাড়িয়ে তিন হাজার ২০০ টাকা, পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা, আট হাজার ২০০ টাকা, সর্বশেষ ১২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। কোন সরকার এভাবে কাজ করেছে? যদিও বেসরকারি খাত, এর পরও মালিকদের বুঝিয়ে তা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বেতন মাত্র ৫ শতাংশ বাড়িয়েছি। আর গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি। তাহলে তাদের আপত্তি কোথায়?’ আন্দোলনকারীদের কারা উসকানি দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মাধ্যমে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেই টাকা দেওয়া হচ্ছে। দুই কোটি ৬২ লাখ কৃষক উপকার পাচ্ছে। তারা অল্প টাকায় সার কিনতে পারছে, কৃষি উপকরণ কিনতে পারছে।’
নির্বাচনের আগে বিএনপি বিভিন্ন ওয়াদা দিলেও তা পূরণ করে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওদের চরিত্র বদলাবে না। এই খুলনা থেকে খালেদা জিয়া বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে শিল্প-কারখানা চালু করবে। উল্টো সব বন্ধ করেছিল। এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র।’
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি প্রমুখ।
সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় যোগ দেন।