মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া সম্মিলনী ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় অগ্রীম টাকা নিয়েও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে ৩ জনকে নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ না দেওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন তারা। টাকা ফেরত চাইতে গেলেই দেওয়া হচ্ছে প্রাননাশের হুমকি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া অবৈধ নিয়োগ ও সভাপতির অপসারণের দাবি তাদের। গত ২০ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব শাহনাজ মিথুন মুন্নি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে অবৈধ ও অজ্ঞ সভাপতি লিয়াকত বিশ্বাস ও অবৈধ নিয়োগ বাতিলের জন্য বলা হয়। কিন্তু কোন নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করেই বহাল তবিয়তেই একের পর এক দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি লিয়াকত বিশ্বাস।
জানা গেছে, উপজেলার কাদিরপাড়া সম্মিলনী ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সেখানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বানের প্রেক্ষিতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে রুকাইয়া ইয়াসমিন, নৈশপ্রহরী পদে তুষার মোল্লা, আয়া পদে তৃষা বেগম আবেদনপত্র দাখিল করেন। তাদের অভিভাবকেরা ওই মাদ্রাসার সভাপতি লিয়াকত আলী বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে টাকা ছাড়া নিয়োগ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমতাবস্থায় নিয়োগ বাবদ রুকাইয়া ইয়াসমিনের স্বামী সাইফুল ইসলাম ১১ লাখ, তৃষা বেগমের স্বামী পরান ৮ লাখ ও তুষার মোল্লা ৮ লাখ টাকা জমি-জমা, গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে পুরো টাকা সভাপতিকে পরিশোধ করেন। অন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়ায় সাজানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে তাদের মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়। সহকারী শিক্ষক হয়েও জালাল উদ্দিন সহকারী সুপার পদে আবেদন করেন। যার আইনগত কোন বৈধতা নেই। নয় নম্বর কোডধারী কখনো আট নম্বর কোডে নিয়োগ পেতে পারেন না। কিন্তু এখানে সেটাই হয়েছে।
তৃষা বেগমের স্বামী পরান বলেন, আমার সহায় সম্বল সব বিক্রি করে বউয়ের চাকুরির আশায় প্রথমে ৬ লাখ মাদ্রাসার সভাপতি হাতে দিই। পরে ডিজির প্রতিনিধি হেলাল সাহেবকে দিতে হবে আরো ২ লাখ টাকা দাবি করেন। চাকরির আশায় আমি সে দাবিও পূরণ করেছি৷ পরে আমার স্ত্রীর চাকরি দেওয়া হয়নি। এখন টাকা ও ফেরত দিচ্ছে না। এমনকি বিভিন্ন মানুষ দিয়ে আমাকে প্রাননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
চাকরি প্রার্থী তুষার মোল্লা বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি লিয়াকত বিশ্বাস আমাকে দিয়ে ৩ টি আবেদন করান। তিনি আমার চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ৬ লাখ টাকা দাবি করেন। এ টাকার জন্য আমি ২২ শতাংশ জমি, স্ত্রীর স্বর্ণালংকার ও ২ টি গাভী বিক্রি করি। পরে ডিজির প্রতিনিধি হেলাল সাহেবকে টাকা দিতে হবে বলে আবারো ২ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আমার বোনদের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ২ লাখ টাকা দিই। সভাপতি আমার চাকরি দেয়নি। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। চাইলেই লিয়াকত বিশ্বাস প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে।
কাদিরপাড়া সম্মিলনী ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আজিজার রহমান বলেন, চাকরির আশায় পরান ৮ লাখ, সাইফুল ১১ লাখ ও তুষার ৮ লাখ টাকা আমার মাধ্যমে মাদ্রাসার সভাপতি লিয়াকত বিশ্বাসের হাতে দিই। ওদের কারো চাকরি হয়নি এখন ওরা আমার কাছে টাকা চাইছে। এতগুলো টাকা আমি কোথা থেকে দেবো? এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষার ২ দিন পর সভাপতি লিয়াকত বিশ্বাসের বাড়িতে বসে পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। ডিজির প্রতিনিধি হেলাল সাহেব ২ দিন সভাপতির বাড়িতে অবস্থান করেন। আমার কাছ থেকে নিয়োগ পরীক্ষায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন।
মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও নিয়োগে বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আবেদ হোসেন রানা বলেন, ব-কলম একজন মূর্খ ব্যক্তিকে মাদ্রাসার সভাপতি করা হয়েছে। নানান জটিলতায় গত ১০ জুন নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পরেও ১৮ জুন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়। যা ছিল সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ, সুপার, সহকারি শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীসহ ৬ টি শুণ্য পদে জনবল নিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও তাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। এমনকি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি লিয়াকত বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। নিয়োগের কথা বলে আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। যা নিয়েছিলাম তা ফেরত দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিএম নকিবুল হাসানের সাথে কথা বলার জন্য বারবার ফোন করেও তাঁর ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।