মাগুরানিউজ.কম:
নানাবিধ সমস্যায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগীর শতাধিক খামার প্রায় বন্ধের পথে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মুরগী ও ডিমের দরপতন, মুরগীর বাচ্চা, পোল্ট্রি ফিড ও ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খামারিদের পুজি সংকট এবং ঋণের দায়ে খামারগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
একসময় শ্রীপুর উপজেলাতে গড়ে ওঠা ছোট বড় দু’শতাধিক মুরগীর খামারের মধ্যে শতাধিক খামার কমবেশী চালু থাকলেও বাকিগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। অব্যাহতভাবে লোকসান গুণতে গুণতে অনেক খামার মালিক পুজিশূন্য হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া মুরগীর বাচ্চা উত্পাদনকারী হ্যাচারি মালিক ও পোল্ট্রি ফিড মালিকদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খামারিরা টিকতে পারছেন না। পোল্ট্রি ফিড ও ১ দিনের বাচ্চার চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে আবার চাহিদা কমলে দাম কমে। একারণে খামারিরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার অধিকাংশ খামারি অব্যাহত লোকসানের কারণে পুজি হারিয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অনেক কষ্টে খামারগুলো বাঁচিয়ে রাখলেও লাভের মুখ দেখছেন খুবই কম । বেশকিছু খামার মালিক পুজি হারানোর ভয়ে তাদের খামার বন্ধ করে রেখেছেন।
জানা গেছে, মুরগীর বাচ্চা উত্পাদনকারী হ্যাচারি ও পোল্ট্রি ফিড মালিকরা সিন্ডিকেট করে একদিনের মুরগীর বাচ্চা এবং ফিডের দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করেছে। ১ দিনের প্রতিটি ব্রয়লার মুরগীর বাচ্চার উত্পাদন করতে হ্যাচারি মালিকদের যেখানে খরচ হয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা অথচ সেখানে খামারিদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। প্রতি চালানে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর সময় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বাচ্চা উত্পাদন হয়ে থাকে আর বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাচ্চা না ফোটার কারণে হ্যাচারি মালিকদের লোকসান গুণতে হয়।১ দিন বয়সী বাচ্চার দাম নির্ধারণ করা হয় খামারি মালিকদের চাহিদার উপর নির্ভর করে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগী খামার থেকে পাইকারি ১৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং খুচরা বাজারে তা কেজি প্রতি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনাতুন্দি গ্রামের লেয়ার খামারি খবির হোসেন মেম্বার জানান, গত মে মাসে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে তার ফার্মের ৬ হাজার লেয়ার মুরগী মারা গেছে। এতে তার প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে তিনি আবারও লাভের আশায় তিনটি খামারে ১ হাজার ২শ’ লেয়ার মুরগীর বাচ্চা তুলে পালন করছেন। একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই গ্রামের দাউদ হোসেন ও পারভেজের খামারের অসংখ্য লেয়ার মুরগী মারা গেছে। তারা দু’জন আবারও ক্ষতি পূরণের আশায় খামারে বাচ্চা তুলে লালন পালন করছেন। তারা জানান, প্রতি ব্যাগ পোল্ট্রি ফিডের দাম প্রায় আড়াই হাজার টাকা, প্রতিটি বাচ্চা পরিপক্ক করতে খরচ হয় ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা । প্রতিটি ডিম উত্পাদন করতে খরচ হয় ৫-৬ টাকা। পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হয় ৭-৮ টাকা দরে। এতে লাভ হয় খুবই সামান্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি তো রয়েছেই। তারপরও খামার মালিকরা ক্ষতি ও লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এ শিল্পটিকে কোনমতে টিকিয়ে রেখেছেন। অদূর ভবিষ্যতে এসব সংকট মুহূর্তে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব হবে না বলেও খামারিরা জানান।