মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুরে প্রচন্ড খরায় পুড়ছে আমন খেত। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায়, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রতি ইউনিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলায় হেক্টরের পর হেক্টর আমন খেত শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়েছে। কোনো কোনো আমন খেতে প্রচন্ড খরায় পুড়ে যাচ্ছে ধান গাছ।
এমতাবস্থায় কৃষকরা বাড়তি টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎচালিত সেচের ওপর ভরসা করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাইর দেখা দিয়ে উৎপাদন ব্যাহত হলেও এ বছর লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রমতে, উপজেলায় এবার ১১ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ অর্জিত হয়েছে। বৃষ্টির পানির অভাবে লক্ষ্যমাত্রার এসব জমির অধিকাংশই সেচের মাধ্যমে চাষ করা হবে।
উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রওশন মোল্লা জানান, এখন পর্যন্ত ৫২ শতাংশ জমিতে ধান লাগিয়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় আর লাগাতে পারছি না। যতটুকু লাগিয়েছি পানির অভাবে মাটি ফেটে যাচ্ছে, ধান গাছ পুড়ে যাচ্ছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচের জন্য অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি, বৃষ্টি হলে বাকিটুকু লাগাবো।
উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের দরিবিলা গ্রামের কৃষক ইসলাম মোল্লা জানান, ভাদ্র মাসেও বৃষ্টি না থাকায় এখন আমাদের মরার উপর খাঁড়ার ঘা। জ্বালানি তেলের মুল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সার ও কীটনাশকের ও দাম বৃদ্ধিতে কৃষক চলতি আমন ধান চাষে দিশে হারা হয়ে পড়েছে। আমরা সাধারণ কৃষক এই অবস্থা চলতে থাকলে ধান রোপণ করা আমাদের জন্য দূঃস্বাধ্য হয়ে পড়বে। জরুরি ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের কৃষক আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, “বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। পাট কাটার পর বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে চাষ করা এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে। সবকিছুরই দাম বেশি, কিভাবে চাষ করবো?”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় এখানকার কৃষকরা বাড়তি টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎ চালিত সেচের ওপর ভরসা করেই ফসল বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় আমন খেতগুলো ফেটে চৌচির হচ্ছে। কৃষকের সমস্যা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে। ৩ টি পাম্পের ২ টি অকেজো হওয়ায় সেচ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাছাড়া আমন ধানের চাষ হয় অনেকটা প্রাকৃতিক বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই হয়ত সময়মত বৃষ্টি হচ্ছে না। এবার আমন ধান চাষ করতে কৃষকদের সেচ দিতে হচ্ছে।