মাগুরার কৃষক আমজাদ হোসেন জার্মান জাতীয় ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে জার্মানীর সমর্থক কৃষক আমজাদ হোসেনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জার্মান শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফার্ডিনান্ড ভন ভাইয়ের।
শনিবার দুপুরে জার্মান রাষ্ট্রদূত মাগুরা স্টেডিয়ামে জার্মান ফুটবল দলের ভক্ত আমজাদ হোসেনের তৈরি করা সাড়ে৩ কিলোমিটার পতাকা দেখেন। এ সময় স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জার্মান শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফার্ডিনান্ড ভন ভাইয়ের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ কে এম তারেক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সেক্টর স্পেশালিষ্ট মেহেদী হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রাজ্জাক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হাজী মকবুল হোসেন ও কৃষক আমজাদ হোসেন।
এ সময় রাষ্ট্রদূত জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে আমজাদ হোসেনকে জার্মান ফুটবল একাডেমীর ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্য কার্ড, একটি ফুটবল, জার্মান জাতীয় দলের একটি জার্সি এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
একই সময়ে আমজাদ হোসেনও রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জিনিস উপহার দেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রদূতকে শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ক্রীড়ামোদীরা মূর্হুমূহু করতালি দিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান।
কৃষক আমজাদ হোসেন তার অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, ১৯৮৭ সালে যখন কোন ওষুধেই তার ব্যক্তিগত একটি কঠিন রোগ ভাল হচ্ছিলনা তখন তিনি জার্মান হোমিও প্যাথির একটি ওষুধ খেয়ে তার রোগ ভাল হয়। এর পরই তিনি জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা বশত জার্মান ফুটবল দলের দীর্ঘ পতাকা তৈরি করেছেন। এই পতাকা দেখতে জার্মান রাষ্ট্রদূত মাগুরায় আশায় তিনি খুবই আনন্দিত। মাগুরাবাসীর পক্ষ থেকে তিনি জার্মান সরকারকেও ধন্যবাদ জানান। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জার্মান রাষ্ট্রদূত আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন কৃষক আমাদের বন্ধু আমজাদ সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যে জার্মান পতাকা তৈরি করেছেন তা জার্মানীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে জার্মানীর পতাকার একটি সাদৃশ্য রয়েছে। দু’দেশের পতাকার ইতিহাস প্রায় একই রকম। তাই আমরা বন্ধু আমজাদকে বিশেষভাবে স্মরণ করবো।
উল্লেখ্য, জার্মান ফুটবল দলের এই অকৃত্রিম ভক্ত আমজাদ হোসেনের (৬৫) বাড়ি মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে। তিনি পেশায় একজন সাধারণ কৃষক। বিশ্বকাপ ফুটবলে জার্মান দলের জন্য তিনি নিজ খরচে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা তৈরি করেছেন। যা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই পতাকা তৈরিতে তিনি খরচ যোগাড় করতে নিজস্ব ৫০ শতক আবাদি জমি বিক্রি করেন। এই পতাকা তৈরিতে তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় করেন।
প্রসঙ্গত, মাগুরা সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের নেহাল উদ্দিন মোল্লার ছেলে আমজাদ হোসেন (৬৫)। পেশায় একজন সাধারণ কৃষক। ১৯৮৭ সালে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। সেই সময় চিকিৎসার জন্য অনেকের কাছে গেছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। অবশেষে জার্মানি থেকে আনা ওষুধ সেবনের পরই তিনি আরোগ্য লাভ করেন। তারপর থেকেই জার্মান ফুটবলের ভক্ত হয়ে গেছেন তিনি। যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমজাদ হোসেন নিজের সামান্য জমির একটি অংশ বিক্রি করে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানের পতাকা তৈরি করে প্রদর্শণ করেন। এই পতাকা নিয়ে এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি জড়ো করছেন নিজ দলের সমর্থকদের।
মাগুরানিউজের পক্ষ থেকে এই ফুটবল প্রেমিককে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।