মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন মানছেন না সরকারি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশ। একই বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন এক যুগেরও বেশী সময় ধরে। বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও খুটির জোর এত বেশি যে, সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিদ্যালয় ফান্ডের লক্ষ-লক্ষ টাকা আত্মসাত করে এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। তিনি সরকারের আদেশ মানতে বাধ্য নন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, সদস্য ও অভিভাবকবৃন্দ লিখিত অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে ২ টি ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে গত ০১/১২/২০২২ তারিখে ওই চেক ২ টি জমা দিয়ে শ্রীপুর সোনালী ব্যাংক থেকে ১,৩২.৮০০/- (এক লক্ষ বত্রিশ হাজার আটশত) টাকা এবং জনতা ব্যাংক থেকে ৭১০০০/- (একাত্তর হাজার) টাকা তুলে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা তার কাছে এই টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হয়েছে জানতে চান। তখন প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন বলেন, তিনি কাউকে হিসাব দিতে বাধ্য নন। তিনি স্কুলের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনেও সব সময় অবহেলা করে থাকেন। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। আবার কখনো কখনো ছুটি না নিয়েই ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন অথচ: হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে রাখেন। তিনি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সাথে প্রায় খারাপ আচরণ করেন। এমন কি অভিবাবকদের সাথেও অসাদাচরণ করেন। এছাড়াও গত ২০১৩/১৪ সালে দিকে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (ইউএনও) এর স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন তৈরী করে শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের সুবিধা ভোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত হয়। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে তার (প্রধান শিক্ষকের) বেতন ৫ বছরের বন্ধ ছিলো।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই স্কুলে কোন জাতীয় দিবস পালন না করেই এসব দিবস পালনে বরাদ্দকৃত টাকা তুলে নেন। এমন কি জাতীয় সংগীতও সঠিকভাবে প্যারেড করান না। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তার এহেন অশিক্ষকসুলভ আচরণে এলাকার অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলেছে। এতে করে কাদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান সর্বনিন্ম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিষয়টি শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হলে তিনি উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলামকে তদন্তে পাঠান। তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে তাকেও নানা প্রকার অপমান জনক কথা বলে তাড়িয়ে দেন। প্রধান শিক্ষকের অসাদাচরণের কারণে কোন ভাল শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে এসে বেশিদিন চাকরি করতে পারেন না। তিনি সহকারী শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এলাকাবাসী অতি সত্তর এই প্রধান শিক্ষকের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তকরার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বনি বেগম বলেন, আমি নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি, প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন মাত্র ৪০ হাজার টাকা তুলবেন বলে আমাকে ভুল বুঝিয়ে ২ টি ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। পরবর্তীতে তিনি প্রতারণা ও বিশ্বাস ঘাতকতা করে ২ টি চেক জমা দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৮ শত টাকা ও জনতা ব্যাংক থেকে ৭১ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে এই টাকা ব্যয়ের হিসাব চাইলে হিসাব না দিয়ে তিনি মাস্তান সুলভ আচরণ করছেন। আমরা এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা ইয়াসমিনের সাথে বিদ্যালয় চলাকালীন সময় কথা বলতে গেলে তিনি তখন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না পরে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের বিষয়। এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। তবে আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সবিতা রানী ভদ্র বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলামকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগের পরিপেক্ষিতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য গত ৫ মার্চ একটি চিঠি পেয়েছি। আগামী ১৪ মার্চ এ বিষয়ে তদন্ত হবে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।