মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুর উপজেলায় চলছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। এ সকল ভাটায় পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে লাইসেন্স ব্যতিত ইট প্রস্তুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৮-এর ‘ঘ’তে বলা আছে, কৃষিজমি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের তোয়াক্কা না করে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবুও বছরের পর বছর ওই সব ভাটা বহাল তবিয়তে ইট তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে চলছে এ সকল ইটভাটা। উপজেলার শত শত কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েছে ভাটার মালিকদের কাছে। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক পরিবার। নেই কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি। পরিবেশ দূষনের পাশাপাশি কৃষি জমিও নষ্ট হচ্ছে ইটভাটার কারণে। বায়ুদূষণের কারণে অত্র এলাকায় শ্বাসকষ্ট রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ ছাড়া ধুলাবালু থেকে অ্যালার্জি, চুলকানিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনি ভেঙে দিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও ইটভাটা প্রস্তুত হয়ে যায়।
সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারঙ্গদিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ফসলের মাঠজুড়ে ড্রাম চিমনির মেসার্স কনিকা ব্রিকস নামের একটি ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি চলছে। ত্রি-ফসলী জমি থেকে থেকে কাটা হচ্ছে মাটি। যা রীতিমত অবৈধ। পুড়ানোর জন্য ভাটায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি ও চেরাই কাঠ।
ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ডিসেম্বরের শুরুতে ভাটার প্রস্তুতি শুরু হয়। এরপর টানা মার্চ মাস পর্যন্ত এ ভাটায় কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরি হয়।
মালিক মুশফিকুর রহমান কালন বলেন, আমি জানি আমার ইটভাটাটি অবৈধ। তাছাড়া উপজেলায় যতগুলো ভাটা আছে সবই অবৈধ। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ সকল ইটভাটা চালাতে হয়। সরকারের কাছে আমরা বৈধতা চাই। কিন্তু সরকার তো দিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ভাটা শুরুর আগে ‘ম্যানেজ’ করতে হয় তাদের।
উপজেলায় একই ধাঁচের এমন অনেক ভাটা রয়েছ। এ সকল ইট ভাটার চেহারাও আগের ভাটার মতোই। এখানেও ড্রাম চিমনি ও কাঠ দিয়েই পোড়ানো হয় ইট। আর অনুমোদন ও ম্যানেজ প্রক্রিয়াও একই রকম।
ওই সব এলাকার একাধিক বাসিন্দাদের সঙ্গে ভাটার বিষয় নিয়ে কথা হয়। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় প্রশাসন। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় চিমনি, পানি ঢালা হয় চুল্লিতে। কিন্তু ভাটা মালিকরা ফের চিমনি তৈরি করে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ভাটা প্রস্তুত করে আবারও ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করে দেন।
মুঠোফোনে কথা হয় পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদারের সাথে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য ব্যবসায়ীদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। যদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে সবুজ আন্দোলন শ্রীপুর উপজেলা শাখার নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ঘেরাও করা হবে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগ জানান, এ সকল ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এ এসব ভাটা বন্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করবেন।