মাগুরানিউজ.কমঃ

বিশেষ প্রতিবেদক –
সন্তানের প্রতি মা-বাবার অকৃত্রিম স্নেহ-ভালোবাসার জুড়ি নেই। সন্তান যেন থাকে ‘দুধে-ভাতে’- এ যেন তাদের প্রাণের চাওয়া। শত ঝড়-ঝঞ্ঝায় মাতৃস্নেহে সন্তানকে আগলে রাখা চাই। তবুও মাঝে মাঝে ঘটে যায় অনাকাঙ্খিত কল্পনাতীত কোন ঘটনা। আজ এক মায়ের বিরুদ্ধে নিজের শিশু কণ্যাকে হত্যার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য হাজির হলো, তা নিষ্ঠুরতার এক করুণ গল্প। মাগুরা শহরের হাজী সাহেব রোডে আজ রবিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
রবিবার দুপুরে হত্যাকান্ডের বিষয়টি প্রতিবেশীরা মাগুরা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার ও অভিযুক্ত মাকে আটক করেছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্তানকে গলা টিপে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ওই নারী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, অভিযুক্ত সুফিয়াকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা বললে সে অকপটে তার মেয়েকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। তবে তার কথাবর্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা মাদক সেবন বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
নিহত শিশুটির নাম মাহি (৩)। শিশুটির মায়ের নাম সুফিয়া বেগম (৪০)। আর শিশুটির বাবার নাম মনু মিয়া বলে জানা গেছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে সুফিয়া ও মনুর বিচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা যায়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে হাজী সাহেব রোডের শাহানা বেগমের বাড়ির তিন তলায় শিশু মাহি ও স্বামীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সুফিয়া বেগম। তিন-চার মাস ধরে সুফিয়া আর মেয়ে থাকেন। আজ বেলা ১টার দিকে সুফিয়া মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দোতলায় নিয়ে আসে। তার দিকে এগিয়ে গেলে সুফিয়া দৌড়ে ৩য় তলার ঘরে উঠে যান এবং রান্নাঘরের সিলিন্ডারের গ্যাস লাইনে আগুন লাগিয়ে ভিতিকর পরিস্থিতি তৈরী করেন। আর বলতে থাকে বাড়িতে আগুন ধরেছে। এ সময় স্থানীয়রা ওই ঘরে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালের পৌঁছার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে ওই নারীর ঘরে ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের ধারণা শিশুটিকে হত্যা করে ধামাচাপা দেওয়া বা আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গ্যাসের সিলিন্ডারে আগুন দেয় ওই নারী।
স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই নারী মাদক ব্যবসা ও সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় ৩ বছর ধরে সুফিয়া ওই বাড়িতে ভাড়া রয়েছেন। সুফিয়ার ২ বিয়ে। মাহি দ্বিতীয় পক্ষের একমাত্র কন্যা। দ্বিতীয় স্বামীর নাম মনু মিয়া। মনু মিয়ার সাথে দেড় বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে সুফিয়ার। সুফিয়ার প্রথম স্বামীর নাম আবু তালেব। তার সাথে সুফিয়ার বিচ্ছেদ হয়েছে ৭ বছর। ওই পক্ষে সুফিয়ার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তারা বাবা আবু তালেবের সঙ্গে থাকেন।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুফিয়া বেগম জানিয়েছেন, সে ক্যানসারের রোগী। নিজে যখন-তখন মারা যাবেন। কন্যা সন্তানের দেখভালের কেউ নেই, তাই নিজেই গলা টিপে হত্যা করেছেন। তবে ওই নারী আসলেই ক্যানসারে আক্রান্ত কি না বা তাঁর মানসিক সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে মাগুরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আহসান হাবীব বলেছেন, শিশু সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ওই নারী। স্থানীয়দের কাছ থেকে তাঁর মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর এ অভিযোগে থানায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি ও ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সব বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে।