মাগুরানিউজ.কমঃ
মাগুরা সদরের একটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন। তিনি দশ হাজার টাকা বেতন পান। নিয়মানুযায়ি বেতনের শতকরা ২৫ ভাগ অর্থাৎ ২ হাজার ৫০০ টাকা উৎসব ভাতা পাওয়ার কথা। তিনি চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) শিটে দেখতে পান ৪ হাজার টাকা উৎসবভাতা পেয়েছেন।
শুধু তিনি নন মাগুরার চারটি উপজেলার ৫৩২টি বেসরকারি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত দেড় হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভুল করে প্রায় এক কোটি টাকা অতিরিক্ত পাঠিয়েছে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি জানাজানির পর শিক্ষকদের উৎসব ভাতার টাকা ছাড় না করতে মাউশি থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের গচ্চা যাচ্ছিল প্রায় কোটি টাকা।
এদিকে ঈদের আগে আর মাত্র কয়েক কার্যদিবস ব্যাংক খোলা রয়েছে। সময়মতো উৎসব ভাতা তুলতে না পারলে শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর মাউশি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ও ঈদুল আজহার উৎসব ভাতার অর্থ অনুদান বণ্টনকারী চারটি ব্যাংকে পাঠানো হয়। ১২টি চেকের মাধ্যমে এ টাকা অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এবং জনতা ও সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যাংক থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের মাধ্যমে টাকা তুলতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উৎসব ভাতার টাকা তুলতে গিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা দেখতে পান, তাদের অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত টাকা জমা হয়েছে। অনেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, তাদের উৎসব ভাতা বেড়েছে কিনা। সন্দেহ হলে ব্যাংক কর্মকর্তারা মাউশিতে ফোন করে জানতে পারেন উৎসব ভাতা বাড়ানো হয়নি। তবে অতিরিক্ত অর্থ কেন পাঠানো হলো, তা জানতে চান তারা। এর পরই এ ঘটনা ধরা পড়ে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পান। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা পান ৫০ শতাংশ। এবার শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ, আর কর্মচারীদের প্রাপ্য ৫০ ভাগের স্থলে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ টাকা।
মাগুরা সদরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন,‘সব স্কুলে ভুল করে অতিরিক্ত বেতনের শতকরা ৪০ ভাগ উৎসবভাতা চলে আসে। সরকার সুবিধা বাড়িয়েছে এমন খবরে টাকা তুলতে গিয়ে বিড়ম্বনার সম্মুখিন হয়েছেন তারা।
মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ফজলে আলম বলেন, ভুল করে শিক্ষক আর অফিস সহকারীকে একই হারে ৫০ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়েছে। ভুল ধরা পড়ার পর ব্যাংকগুলোতে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কেউই টাকা তুলতে পারেননি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাগুরা জেলা শাখার ইকবাল আহমেদ কবি বলেন, কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে নিরীহ শিক্ষক-কর্মচারীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঈদের আগেই শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের উৎসব ভাতা প্রদানের জন্য তিনি জোর দাবী জানান।