জি২০ শীর্ষ সম্মেলন : বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরবে ভারত

নিউজ ডেস্ক-

আসন্ন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরবে ভারত। সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে এই গুরুত্ব এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জোট জি২০-এর সদস্য নয় বাংলাদেশ। জোটের বর্তমান সভাপতি ভারত ৯টি দেশকে বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে। শুধু শীর্ষ সম্মেলন নয়, ভারত তার জি২০-এর সভাপতিত্বের বছরব্যাপী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশকে সঙ্গে রেখেছে। বৈঠকগুলোতেও বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে।

নয়াদিল্লি থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী শনি ও রবিবার জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।

তিনি জি২০ শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কিত সব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং এর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার বিশ্বনেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার উপযুক্ত মঞ্চ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিগত মাসগুলোতে বাংলাদেশ জি২০ সম্পর্কিত বৈঠকগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকগুলোতে অনেক মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

জি২০ বৈঠকগুলো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেরও উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, জি২০ একটি উচ্চ পর্যায়ের মঞ্চ। সেখানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ইস্যুতে তার জোরালো বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এমন এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে বসতে যাচ্ছেন, যখন গণতন্ত্র, নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশ তাঁর সরকারের সমালোচনা করছে।

এদিকে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, জি২০-এ ভারতের সভাপতিত্বের বছরে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ কেবল ভারতের কাছের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বের প্রতিফলন নয়, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের বিশ্বাসও এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রণয় ভার্মা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও ক্রমবর্ধমান সামর্থ্য জি২০-এর আলোচনায় বাড়তি মাত্রা যোগ করবে বলে ভারত বিশ্বাস করে।

অন্যদিকে ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপ-উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ বলেন, বাংলাদেশজুড়েই এখন অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দৃশ্যমান। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি সাফল্যের গল্প। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তার উদাহরণ বাংলাদেশ-ভারত।

পঙ্কজ শরণ বলেন, “যুক্তিসংগত কারণেই ভারতের জনগণ, সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জি২০ সম্মেলনের জন্য নয়াদিল্লিতে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছেন। আমরা বাংলাদেশকে ‘গ্লোবাল সাউথের’ গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর মনে করি।”

ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রধান সমন্বয়ক হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথ’ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করে ভারত। গ্লোবাল সাউথের অংশীদারকে ভারত অনেক গুরুত্ব দেয়। জি২০-এ ভারত তার সভাপতিত্বের সময় বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

ভারতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), কলকাতার সহযোগী ফেলো সুহাসিনী বোসের মতে, ভারত জি২০-এ তার বৈশ্বিক এজেন্ডা রূপায়ণের চেষ্টা করছে। এজেন্ডাগুলোর অনেকগুলোই তার প্রতিবেশী অঞ্চলে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের সমর্থন প্রয়োজন। বাংলাদেশের গুরুত্বের কারণ হিসেবে তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের গুরুত্ব, ভারতের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবেলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সাইবার নিরাপত্তা এবং আরো জোরালো বহুপাক্ষিকতা গড়তেও ভারতের কাছে বাংলাদেশের বিশেষ গুরুত্ব আছে।

উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল সাউথ’ বলতে বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বোঝায়। সাম্প্রতিক সময়ে কভিড মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের উত্থান ও বিভিন্ন দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির কারণে ‘গ্লোবাল সাউথ’ বিশ্বের ভূ-রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিশ্বে পরাশক্তিগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মধ্যে সরাসরি কোনো পক্ষ না নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো। বাংলাদেশ এখনো কোনো ভূ-রাজনৈতিক বলয়ে যোগ দেয়নি।

বাংলাদেশ বিশ্বে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি), জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কণ্ঠস্বর। জি২০ সম্মেলন সামনে রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, অভিবাসী ইস্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবে। আঞ্চলিক সংযোগ, সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার ওপরও বাংলাদেশ জোর দেবে। বাংলাদেশ বিশ্বশান্তির কথা বলবে।

ছয় এজেন্ডা

জি২০-এর সভাপতি হিসেবে ভারত এবারের শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ছয়টি এজেন্ডা সামনে এনেছে। এগুলো হলো সবুজ উন্নয়ন, জলবায়ু অর্থ ও জীবন, ত্বরান্বিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, এসডিজিতে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা, প্রযুক্তিগত রূপান্তর ও ডিজিটাল সরকারি অবকাঠামো, ২১ শতকের জন্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন।

এ ছাড়া এবার জি২০-এ আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সম্মেলনে থাকছেন না পুতিন, শি চিনপিং

জি২০-এর সদস্য ১৯ দেশের (আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুর্কিয়ে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের প্রতিনিধিরা নয়াদিল্লিতে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং নয়াদিল্লিতে সম্মেলনে যাচ্ছেন না। ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে। ভারত আইসিসির রোম সংবিধির সদস্য নয়। এর পরও পুতিন জি২০ সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।

এদিকে চীনের মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংও নয়াদিল্লি যাচ্ছেন না। তাঁর পরিবর্তে চীনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াছিয়াং।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশা করেন, জি২০ মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগগুলো জি২০ আমলে নেবে।

April ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Mar    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  

ফেসবুকে আমরা

বিভাগ

দিনপঞ্জিকা

April ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Mar    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
%d bloggers like this: