ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির অভিযোগে তিন আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডরে আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা হলো।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কোম্পানির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, পরিচালক ডা. হেলানা পাশা ও প্রধান উৎপাদন কর্মকর্তা নৃগেন্দ্রনাথ বালা। রায় ঘোষণার সময় তিন আসামির মধ্যে মিজানুর রহমান ও ডা. হেলানা পাশা আদালতে হাজির ছিলেন। আরেক আসামি নৃগেন্দ্রনাথ বালা পলাতক রয়েছেন। অন্য দুই আসামি মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ নোমান এবং আজফার পাশাকে তাদের দায়দায়িত্ব প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেন আদালত। তবে মামলার অন্য তিন আসামি ডা. মোঃ আনোয়ার পাশা, ইসরাত পাশা এবং জাহিদ ইফতেখার পাশা মৃত্যুবরণ করায় মামলার কার্যক্রম থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে অ্যাডফ্লেম নামক কোম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এতে অ্যাডফ্লেম কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ২ জানুয়ারি আটজনকে আসামি করে ঢাকার ড্রাগ আদালতে মামলা করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিদর্শক আবুল খায়ের চৌধুরী।
প্রায় ২১ বছর আগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের সাক্ষ্য ও রায়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতালে কিডনি বিকল হয়ে শিশুমৃত্যুর হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) মকবুল হোসেন ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই ওষুধ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করেন। ওই সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশুমৃত্যুর খবরও প্রকাশ হয়। এরপর ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিদর্শক আবুল খায়ের চৌধুরী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকে তাদের উৎপাদিত ফ্লামোডল নামে প্যারাসিটামল সিরাপ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠান। নমুনা পরীক্ষা শেষে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি তাদের অভিমতে জানায়, প্যারাসিটামল তৈরিতে ব্যবহৃত প্রোপাইলিন গ্লাইকলের পরিবর্তে চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়েছে। এসব প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে কিডনি বিকল হয়ে হতভাগ্য শিশুদের মৃত্যু হয়।