মাগুরানিউজ.কমঃ
বলা যায়, জামাই আদরের উৎসব জামাই ষষ্ঠী। আজ সে উৎসবের দিন। পার্বণটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও এর প্রভাব বাঙালী জীবনেও দেদীপ্যমান। পার্বণটিতে মাগুরাতে বাঙালী সমাজে উৎসবমূখর আমেজ ছড়িয়ে দিতো একসময়। নানা কারণে এবং মানচিত্রের ভৌগলিক পরিবর্তনে সে অবস্থাটি এখন আর নেই।
তারপরও পার্বণ হিসেবে মাগুরার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসবটি ধরে রেখেছেন এবং আমাদের গ্রামীণ জীবনে এখনো এর সার্বজনীন আবহ দেখতে পাওয়া যায়। জামাইদের কেনাকাটার কারনেই বাজারে আগুনের উত্তাপ ছড়িয়েছে আজ। মিষ্টির দোকানগুলোতে ভিড় লেগেছে।
আশুতোষ ভট্টাচার্য ‘বাংলার লোকসংস্কৃতি’ গ্রন্থে লিখেছেন, বছরে অন্তত একবার জামাতাকে (জামাই) আনুষ্ঠানিকভাবে সম্বর্ধনা জানানো হয়, অনুষ্ঠানটি জামাই ষষ্ঠী নামে পরিচিত। যতদিন পর্যন্ত শাশুড়ী বেঁচে থাকেন, জামাতা বছরের এই দিনটিতে তার কাছ থেকে নূতন বস্ত্র এবং পরিতোষ সহকারে খাদ্য ও সম্বর্ধনা লাভ করে।
আসলে জামাই ষষ্ঠীর সমস্ত আয়োজন করা হয় বাড়ির জামাইকে ঘিরে। জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এ লৌকিক আচারটি পালন করা হয় বলেই এর নাম জামাই ষষ্ঠী।
জামাইদের জন্য খুবই লোভনীয় জামাই ষষ্ঠীর ভুড়িভোজ পর্ব। এ পর্বে দুপুরের ভুড়িভোজ, সাত রকমের ভাজা, শুক্তো, মুগের ডালের মুড়িঘন্ট, বিভিন্ন মাছের বাহারি রকমের পদ, কচি পাঁঠার ঝোল, চাটনি,দই-মিষ্টি, আম কাঁঠাল আরো কতো কি! সকাল থেকে শ্বাশুড়ি মায়েরা এতোসব রান্না করেন। নিজেরা কিন্তু উপোস থাকেন কেউ কেউ আবার নিরামিশ খান।
জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি, যখন আম-কাঁঠালের গন্ধে চারদিক সুবাসিত, তখনই জামাই ষষ্ঠী ব্রতটি হওয়ায় এর হাওয়া ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে গ্রামীণ সাধারণ জনজীবনেও। এ সময় শ্বশুড় বাড়িতে জামাইরা নিমন্ত্রিত হন। ঠিক পূজোর মত না হলেও বাড়িতে বাড়িতে ‘জামাই আদরের’ ঘটা পড়ে যায়।
জামাইবাবাজী কিন্তু খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি আসেনা, যতই আত্মভোলা হোক না কেন, শাশুড়ি মায়ের জন্য তাঁত বা ঢাকাই জামদানী, ঝুড়ি ভর্তি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পান-সুপুরী, নদীর ঘাট থেকে কানকো নাড়ানো পাকা রুই বা কাতল মাছ, গরম রসগোল্লার হাঁড়ি, ছানার সন্দেশ ভর্তি বাক্স সাথে আনতে ভোলেনা।