মাগুরানিউজ.কমঃ
মাগুরায় জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ৫ শতাধিক গ্রাহকের অন্তত ৪ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের ছুটির সুযোগে প্রতিষ্ঠানটি অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যাবার পর গত কয়দিনে ফিরে না আসায় স্থানীয় আমানতকারীদের মধ্যে চরম হতাশা কাজ করছে।
“আয় থেকে দায় শোধ, সঞ্চয়ের মাধ্যমে পুজি গঠন হউক”-এমন শ্লোগান দিয়ে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে মাগুরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। শহরের ভায়নার মোড়ে আল আমিন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠানটি মাসিক ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে একটি ফ্লাট ভাটা নেয়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামের খন্দকার আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তি নিজেকে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে ভাড়া নিয়ে সেখানে আটজন কর্মচারি নিয়োগ দেন বলে জানা গেছে।
শাহরিয়ার রহমান নামে একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ডলি নামে একজন হিসাবরক্ষক, একজন পিওন ও চারজন মাঠকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে এই সমিতিটি মাগুরায় এতদিন কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও গত কয়দিন ধরেই তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে রয়েছে বলে স্থানীয় আমানতকারির জানিয়েছেন।
আমানতকারীদের অভিযোগ শুরুতে তারা স্থানীয় চায়ের দোকানি ও কাপড় ব্যবসায়ীদের ছোট ছোট ঋণ দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে। যেটিকে পূজি করে গত আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি অন্তত ৫ শত আমানতকারি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। যার বিপরীতে অন্তত ৪ কোটি টাকা তাদের ঘরে জমা পড়ে।
মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কার্য সহকারী আবদুল আজিজ পালিয়ে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানের একজন আমানতকারী। পেনশনের ৬ লক্ষ টাকা তিনি ডিপিএস হিসেবে সেখানে জমা করেন। অন্যদিকে প্রতিমাসে ১ হাজার ৫ শত টাকা করে সঞ্চয় হিসেবে জমা করেন। সর্বসাকূলে সেখানে তার প্রায় ৯ লক্ষ টাকা গচ্ছিত রয়েছে। অথচ অবসর জীবনের এতগুলো টাকা হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে পথে নামা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে ভাড়াকৃত বাড়ির মালিক হাফিজুর রহমান জানান, তিনি নিজেও গত ৮ বছরের ঘরভাড়ার প্রায় ৬ লক্ষ টাকাই সেখানে গচ্ছিত রেখেছেন। এতে তার এতদিনের ভাড়ার টাকা তো গেছেই উপরোন্তু স্থানীয় আমানতকারীরাও তার উপর চড়াও হচ্ছেন। যে কারণে তিনি বাধ্য হয়ে শনিবার সদর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্মচারিরা ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের যোগাযোগের নম্বরগুলিও বন্ধ রাখায় এই প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন জানান, সমবায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে খোজ করা হচ্ছে শুনেছি। তবে ওই সমিতির কোন আমানতকারী এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।