রাজীব মিত্র জয়-
গত দুই বছরে ইলিশ যথার্থ ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ হয়ে উঠেছে। এই সময়টাতে দেশে বড় ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে। আগে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বাজারে খুব কমই দেখা যেত। দামও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ছিল না। এ বছর বাজারে প্রচুর পরিমাণে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে। সাগর ও নদ-নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন গত তিন বছরে ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে। শুধু আকার ও ওজন নয়, এবার ইলিশের মোট উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে।
ইলিশের আকার ও পরিমাণ বাড়ার মূল কারণ হলো, চলতি বছর বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় ইলিশ না ধরায় তারা বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা বন্ধ করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
সারা দেশের মতো মাগুরার মহম্মদপুরেও গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রজনন মৌসুমের পূর্বে থেকেই জেলেদের সচেতন করা হয়। তারপরও যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামবে; তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে মৎস বিভাগ।
তবে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞায় বেকার হয়ে পড়েছে নদীনির্ভর এ অঞ্চলের প্রায় ৫০০ জেলে। অভাব-অনটনের মধ্যে তাদের দিন কাটলেও সরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছে না তারা ।
উপজেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় নিবন্ধিত ১ হাজার ৫৮৩জন জেলে রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫০০ জেলে মধুমতি নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে জেলেরা তাদের নৌকাগুলো নিরাপদে রেখে জাল বাড়িতে নিয়ে গেছেন। নৌকা ভাসাতে না পারায় নদীনির্ভর এসব জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অলস সময় পার করছেন তারা। এসব পরিবারের দিন কাটছে অভাব-অনটনের মধ্যে। কেউ অর্ধাহারে কেউ অনাহারেও দিন কাটাচ্ছেন।
নদীনির্ভর কয়েকজন জেলে জানান, মধুমতী নদী থেকে আমরা মাছ শিকার করে থাকি। ইলিশ সম্পদ বাড়াতে ইলিশ ধরায় যে নিষেধাজ্ঞা হয়েছে তা আমরা মানি। কিন্তু এসময় আমাদের অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাব-অনটনে আছি। সরকারিভাবে আমরা কোন সহযোগিতাও পাচ্ছি না।
লাকু মোল্যা নামে এক জেলে বলেন, আমরা সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। তাতে কোনো কাজ হয়নি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে আমাদের কষ্টটা একটু কমে যেত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র দাস বলেন, ২২দিন ইলিশ ধরার পাশাপাশি সংরক্ষণ, বিপণন, পরিবহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ সময় সরকারিভাবে সিলেক্টেড কিছু জায়গায় সহায়তা দেওয়া হয়। মহম্মদপুর উপজেলা ইলিশ জোনের মধ্যে না পড়ায় তারা সরকারিভাবে সহায়তা পাচ্ছে না।
সন্দেহ নেই, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দরিদ্র জেলেদের পরিবারের সদস্যরা সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু দেশের সব জেলেকেই বুঝতে হবে তাঁদের নিজেদের, সর্বোপরি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনারা নিজেরাই যখন নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরত থাকবেন, তখন ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ অনিবার্যভাবেই উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে। সরকারিভাবে এসব জেলেরা দ্রুতই সহযোগিতা পাবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।
ছবি ফাইল ছবি।