অলিম্পিককে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপ যে অন্য ব্যাপার, অন্য উন্মাদনা। বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে বৈশ্বয়িক কোনো টুর্নামেন্টেরই যেন তুলনা নেই।এখানে থাকে নখ কাঁমড়ানো উত্তেজনা, থাকে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, আবেগ, হাসি এবং কান্না। অপেক্ষার পালা শেষ, সময় এখন সেই ফুটবল আবেগে গা ভাসিয়ে দেওয়ার। এরেনা ডি সাও পাওলোতে স্বাগতিক ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে আজ রাতে শুরু(রাত ২টা) ২০তম ফিফা বিশ্বকাপ-২০১৪। ৩২ দলের এ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ১৩ জুলাই, রিও ডি জেনিরোর ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম মারকানায়।
ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে হবে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে তা শেষ হবে ১২টা ৪০ মিনিটে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ দেখা যাবে ভারতীয় চ্যানেল সনি সিক্স, সনি সিক্স এইচডি, সনি সেট ম্যাক্স, বাংলাদেশী চ্যানেল মাছরাঙা, গাজী টিভি এবং বিটিভিতে।
এবারের বিশ্বকাপ দেখতে হলে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দর্শকদের রাত জাগতেই হবে। কারণ বেশীরভাগ ম্যাচ মধ্য ও ভোর রাতে। অবশ্য এটা ফুটবল প্রেমীদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। কারণ বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই তো রাত জাগা।
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে বসেছিল বিশ্বকাপের প্রথম আসর। ১৩ দলের অংশগ্রহণে সে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক উরুগুয়ে। ১৯৩৪, ১৯৩৮-পরপর দুটি বিশ্বকাপ জিতে নেয় ইতালি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য হতে পারেনি পরপর দুই আসর। ১৯৫০ সালে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। ফাইনালে উরুগুযের কাছে হেরে বুক ফেটে চৌচির হয়েছিল ব্রাজিলিয়দের।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারের আসর সবচেয়ে ব্যয়বহুল। বারবার বাজেট বেড়ে শেষ পর্যন্ত ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে আয়োজকদের। অথচ ২০০৬ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে জার্মানির খরচ হয়েছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। আর ২০০২ এর জাপান- কোরিয়া বিশ্বকাপ শেষ করতে আয়োজকদের মোট খরচ হয় ৫ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য নতুন নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ, অন্যান্য অবকাঠামো এবং নিরাপত্তার পিছনেই এবার বেশীর ভাগ অর্থ খরচ হয়েছে।
১২ টি শহরের ১২টি শহরে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ গুলো। অনেকগুলো স্টেডিয়াম নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলো করা হযেছে সংস্কার। নিমার্ণ করা হয়েছে রাস্তা-ঘাট, নতুন টার্মিনাল।
নিমার্ণ কাজ শেষ করতে রীতিমত গলদঘর্ম হয়েছে আয়োজকদের। স্টেডিয়াম ধ্বসে পড়া শ্রমিক মৃত্যুর মতো একের পর এক দুর্ঘটনা দারুণ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয় আয়োজকদের। ব্রাজিলের সামর্থ নিয়ে অনেকবারই প্রশ্ন তোলে ফিফা। সেপ ব্লাটার একবার তো বলেই ফেলেন,‘ ব্রাজিলকে আয়োজন করতে দিয়ে ভুলই হয়েছে।’
তবে সেই সেপ ব্লাটারের মুখে এখন অন্য সুর। বলেছেন,‘ ব্রাজিল দারূণ সফল হবে। এটা হবে গ্রেট আয়োজন।’ একই কথা অনেক সমালোচনা সহ্য করা ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফও। তিনি বলেন,‘ ব্রাজিল এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। এতো বড় আয়োজন করতে গেলে একটু আধটু ভূল থাকেই।’
একটু আধটু নয়, এতো টাকা খরচ করে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ আয়োজনকে মস্ত বড় ভুল হিসেবে দেখছেন বিরোধীরা। পেটে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই- এমন লোকদের অভাব নেই সেখানে। বাজে অবস্থা স্বাস্থ্য খাতের। শুরু থেকেই এসব যুক্তি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তারা। বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিবাদে বারবার রাস্তায় নেমে আসেন বিরোধীরা। অবশ্য সময় গড়ানোর সঙ্গে গলার জোরও তাদের কমে গেছে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সফলতম দেশ ব্রাজিল। পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতে সবার উপরে তারা। চারটি বিশ্বকাপ ঘরে তুলে ইতালি। তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে। একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন।
বিশ্বকাপ মানেই ব্রাজিল ফেভারিট। আর এবার তো নিজ দেশে। তাই নেইমারের দলের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশী মনে করা হচ্ছে। আছে মেসির আর্জেন্টিনা, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন, শক্তিশালী জার্মানি। গোনায় ধরতে হবে সুয়ারেজ ও কাভানির দল উরুগুয়েকেও। আর ফুটবলে বরাবরের লড়াকু দলটির নাম ইতালি।
ব্রাজিলের সামনে দুটো বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপ জেতা এবং সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন শেষ করা। দুটি পথই কুসুমাস্তীর্ন নয়। ব্রাজিল কি ঠিকঠাক পারবে? দেখা যাক।