মাগুরানিউজ.কমঃ
ট্যানারি শিল্পের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য একটি উপকরণের নাম বেটিং এনজাইম। গুরুত্বপূর্ণ ওই উপকরণটি আবিস্কারে সফল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। ওই আবিস্কারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সৈয়দ রুবেল হোসেন নামের এক তরুন। তিনি মাগুরার মহম্মদপুরের হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের সৈয়দ সলেমান আলী ও শিউলী আক্তারের ছেলে। সৈয়দ রুবেল হোসেনের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (আর্ন্তজাতিক গবেষকের স্বীকৃতি) প্রদান করা হয়। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে তার হাতে ওই স্বীকৃতির সনদ তুলে দেয়া হয়।
চামড়া প্রক্রিয়াকরণের একটি অপরিহার্য ধাপ হচ্ছে বেটিং; যেখানে বেটিং এনজাইম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাঁচা চামড়াকে পণ্য উৎপাদনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে বেটিং-এর তথা এই এনজাইমের কোনো বিকল্প নেই। চামড়া গুনগতমান, টেকসই ও আরামদায়ক পণ্য উৎপাদন নির্ভর করে বেটিংয়ের সফলতার উপর। চামড়া শিল্পের জন্য অপরিহার্য ওই উপকরণটি এখনো পর্যন্ত উচ্চ মূল্যে জার্মানী থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
এ উপকরণটি দু’রূপে পাওয়া যায় একটি পাউডার, অন্যটি তরল। এরমধ্যে তরল বেটিং অধিক কার্যকরী। কিন্তু জার্মানী থেকে তরল বেটিং আমদানি জটিল ও অধিক ব্যয়বহূল। যে কারণে পাউডার বেটিং আমদানির পর দ্রবণ তৈরি করে দেশের চামড়া শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এ শিল্পের জন্য অপরিহার্য ওই উপকরণটি সংশ্লিষ্টদের কাছে বেট পাউডার নামে পরিচিত।
সৈয়দ রুবেল হোসেনের জন্ম ১৯৮৬ সালে। মাগুরার মহম্মদপুরের নিভৃত হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী আর. এস. কে. এইচ ইনিস্টিটিউশন থেকে এসএসসি এবং আমিনুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সাথে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক সম্পন্ন করেন।
স্নাতক শেষে তিনি গবেষণা বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধীনে উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে। ২০১০ সালের শুরু থেকেই তিনি বেটিং এনজাইম নিয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর সাথে প্রধান গবেষণা উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজাম্মেল হক এবং গবেষণা সহযোগি ছিলেন আরাফাত আল-মামুন, নাহিম আহমেদ আকন্দ ও রুবেলের সহপাঠী রুহুল আমীন টুটুল।
দীর্ঘ ৩ বছর গবেষণার পর চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারিতে বেটিং এনাজইম আবিস্কারে সফল হন তাঁরা। দেশীয় কাঁচামালে এবং স্বল্প ব্যয়ে তরল বেটিং উৎপাদনে অবিশ্বাস্য সাফল্য বাংলাদেশের জন্য অনন্য ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। গত ২৫ ও ২৬ মে ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে আমেরিকার কেয়ারস’র আয়োজনে বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো বায়োটেকনোলোজি (জৈব প্রযুক্তি) বিষয়ক এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীলঙ্কার বিজ্ঞান প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর তিশা ভিতারানা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর প্রেসিডেন্ট ড. শমসের আলী। ওই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের আরো অনেক আবিস্কারের সাথে বাংলাদেশে আবিস্কৃত বেটিং এনজাইমকে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি দেয় আমেরিকার গবেষণা সংস্থা (কেয়ার’স)।
তরুন বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ রুবেল হোসেন জানান, চাউলের কুড়া ও ব্যাকটেরিয়া সেল থেকে খুব সহজেই তরল বেটিং উৎপন্ন সম্ভব। তিনি বলেন, জার্মানীর তরল বেটিং প্রতি লিটারের মূল্য ৩শ’ ৫০ টাকা। যেখানে দেশে উৎপাদিত সমগুণের তরল বেটিং প্রতি লিটার ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার এই সফলতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে দেশেই তরল বেটিং উৎপাদন সহজ হবে। সেক্ষেত্রে দেশের চামড়া শিল্পের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তাণি করেও বৈদিশ মুদ্রা অর্জণ সম্ভব বলে জানান তিনি।