মাগুরানিউজ.কম:
মাগুরায় আবারো ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ভুক্তভোগি কৃষকরা সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। কৃষকরা দ্রুততম সমযের মধ্যে ঋণমুক্তির স্বীকৃতি পত্রের দাবির পাশাপাশি ঘটনার মূল নায়ক শফিউদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় বাজার থেকে ব্যাংক ও গুদাম তুলে দেবার হুমকি দেন।
মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া কৃষি ব্যাংক শাখায় প্রায় দেড় কোটি টাকার শষ্য গুদাম ঋণ জালিয়াতির এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা সোমবার দুপুরে আড়পাড়া বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এছাড়া অভিযুক্ত গুদাম রক্ষকের মালিকানাধীন একটি রাইস মিলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষক বাবর আলী, সিদ্দিকুর রহমান, মান্নান বিশ্বাস, আবু তালেবসহ অন্যান্যরা জানান, আড়পাড়া বাজার শষ্য গুদামের রক্ষক শফি উদ্দিন শালিখা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কৃষকদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকার ঋণ তুলে নেন। সম্প্রতি ব্যাংক থেকে ওইসব কৃষকদের কাছে খেলাপী ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ের নোটিশ গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, গুদামের রক্ষক শফিউদ্দিন আড়পাড়া শষ্য গুদাম ঋণ প্রকল্পের গুদামে শষ্য মজুদ দেখিয়ে ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল সময়কালের বিভিন্ন সময়ে তাদের নামে ওই ব্যাংক থেকে মাথাপিছু ১ লাখ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা করে ঋণ উত্তোলন করে। কিন্তু কৃষককরা সেখানে কোন শষ্য মজুদ রাখেননি। পরে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপরি চিঠি গেলে তারা এটি জানতে পারেন ও আজ সোমবার বিক্ষোভে অংশ নেন।
এ বিষয়ে আড়পাড়া কৃষি ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার দায়িত্বকালে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে ২৭ আগষ্ট ২০১৪ তারিখে শফিউদ্দিনের নামে ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। মামলাটি বিচারাধিন রয়েছে। এছাড়া ঋণ জালিয়াতির ঘটনার ফলে আলী, রাজকুমার ও আব্দুল গফুর নামে আড়পাড়া কৃষি ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা চাকুরীচ্যুত হয়েছেন। ব্যাংকের কাগজপত্রে কৃষকদের ঋণ নেবার সব ধরনের তথ্য প্রমাণ আছে। সাধারনত গুদামে শষ্য জামানত রেখে ভাউচার জমাদানের পরই এ ধরনের ঋণ দেয়া হয়। এ কারণে কৃষকদের নামে খেলাপী ঋণ আদায়ের চিঠি গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে অভিযুক্ত শফিউদ্দিন পলাতক রয়েছে। বিক্ষুদ্ধ কৃষকরা আড়পাড়া বাজারে থাকা তার একটি রাইস মিলে তালা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, কৃষকদের নামে এ ধরনের ঋণ দেখিয়ে উত্তোলিত টাকায় শফিউদ্দিন ও অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা নিজেরা নানা ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে এ ব্যবসা চলে আসছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় গুদাম রক্ষকদের জন্য এ ধরনের জালিয়াতি সহজ হয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, যে ঘটনায় অতীতে ৩ কর্মকর্তার চাকরী গেছে ও মামলা হয়েছে। সে বিষয়টি কৃষকদের জানানো হয়নি। বরং সব জেনে শুনে কৃষকদের নামে ভুয়া ওই ঋণের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যেটি রহস্যজনক।
শালিখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিহাদ খান বলেন, ‘জালিয়াতির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ইতিপূর্বে খেলাপী কিছু ঋণের বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছিলেন। বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। এ ব্যাপারে এখনো কোন মামলা হয়নি’ ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সদরের আলমখারী কৃষি ব্যাংকে ৪ কোটি টাকার শষ্য ঋণ নিয়ে এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টির এখনো কোন সুরাহা হয়নি।