মাগুরানিউজ.কম:
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের আগের দুই আসরে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০১১ সালে প্রথম আসরে ছয় দলের মধ্যে চতুর্থ। আর ২০১৩ সালে দ্বিতীয় আসরে সাত দলের মধ্যে তৃতীয়, এই ছিল বাংলাদেশের সাফল্য। কিন্তু সেসব এখন অতীত!
ঐতিহাসিক এক বিজয়ে পাল্টে গেছে সব পরিসংখ্যান! সিলেটে অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলার দুরন্ত কিশোররা! সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে আফগানদের ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
আর এই অসাধারণ জয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের পক্ষে জয়সূচক গোল করে নিজেদের নাম ইতিহাসের পাতায় লিখিয়েছে সিলেটের লোকাল হিরো সাদউদ্দিন। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে গোলটি করে সে।
ম্যাচের ১২ মিনিটে বাংলাদেশকে প্রায় স্তব্ধই করে দিচ্ছিল আফগানরা! বাংলাদেশের জালও কাঁপিয়েছিল তারা। তবে অফসাইডের কারণে তাদের গোলটি বাতিল হয়। ১৩ মিনিটে বাংলাদেশের সাদউদ্দিনকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখে আফগান অধিনায়ক অমিদ হায়দার সানে।
ম্যাচের ১৬ মিনিটে ডান উইং থেকে বাংলাদেশের ৯ নং জার্সিধারী সরওয়ার জামান নিপুর উদ্দেশে লম্বা পাস বাড়ায় অধিনায়ক শাওন। কিন্তু তার দুর্বল শটে গোল পায়নি বাংলাদেশ। ২৭ মিনিটে বাংলাদেশ অধিনায়ক শাওনের কাছ থেকে বল পেয়ে চমৎকার ড্রিবলিংয়ে নিপু বল বাড়ায় সাদউদ্দিনের দিকে। সাদ পা ছোঁয়ালেই গোল হতে পারত। তবে বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয় সে।
ম্যাচের ৩৭ মিনিটে বাংলাদেশের ডি-বক্সে বল পায় আফগানিস্তানের ৯ নং জার্সিধারী আবদুল নাসের আমিনি। তাকে ফাউল করে বসে বাংলাদেশের ৩৮ নং জার্সিধারী জাহাঙ্গীর আলম সজীব। পেনাল্টি পায় আফগানরা। এক গোলে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় তখন বাংলাদেশ। গোটা স্টেডিয়াম নীরব!
কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে পেনাল্টি মিস করে বসে আফগান অধিনায়ক অমিদ হায়দার সানে! বল পোস্টে না রেখে সে উড়িয়ে মারে ওপর দিয়ে! প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে আফগানিস্তানের ১৪ নং জার্সিধারী শের আহমদ হামিদি ফাঁকায় বল পেয়েও দুর্বল শট নেয়। বাংলাদেশ গোলরক্ষক ফয়সল আহমদ সহজেই তা গ্লাভস-বন্দি করে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে উভয় দল। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। তার ফল দ্রুতই পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে কর্নার কিক পায় বাংলাদেশ। খলিল ভুঁইয়ার কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক শাওন হোসেন বল বাড়ায় সাদউদ্দিনের দিকে। আলতো ছোঁয়ায় গোল করতে কোনো ভুল করেনি লোকাল হিরো সাদ। এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বাংলাদেশের সাদউদ্দিনকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখে আফগানিস্তানের ৯ নং জার্সিধারী আবদুল নাসের আমিনি। ৫৯ মিনিটে আফগান অধিনায়ক অমিদ হায়দার চমৎকার থ্রু বাড়ায় আবদুল নাসের আমিনির উদ্দেশে। কিন্তু ভালো জায়গায় থেকেও গোল পোস্ট নিতে ব্যর্থ হয় সে।
ফাউলের ছড়াছড়ির এই ম্যাচে ৬০ মিনিটে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখে বাংলাদেশের সরওয়ার জামান নিপু। ৬৪ মিনিটে রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজানোর পরও গোলে শট নেওয়ায় হলুদ কার্ড দেখে বাংলাদেশের ৩৬ নং জার্সিধারী আতিকুজ্জামান। ৭১ মিনিটে আফগান বদলি খেলোয়াড় রামিন আজিজির দারুণ ক্রসে বাংলাদেশকে গোল খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে বাংলাদেশ গোলরক্ষক ফয়সাল। ফিস্ট করে বাঁচায় দলকে। ৭২ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখে বাংলাদেশের মো. রনি।
৭৭ মিনিটে আবারও দারুণ এক ক্রস করে আফগান বদলি খেলোয়াড় রামিন আজিজি। হাবিবুল্লাহ কাইয়ুমির চমৎকার এক হেড চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশ অধিনায়ক শাওন হোসেনের নেওয়া ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত এক হেড নেয় মো. রনি। তবে আফগান পোস্টে লেগে বল চলে যায় বাইরে। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল হয়নি। তবে গোল দেওয়ার পর বাংলাদেশ রক্ষণের খোলসে ঢুকে পড়ে।