মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তার উপর হামলার অভিযোগে উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের শ্রীকোল গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের দায়ে এক গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে এই হামলার সূত্রপাত হয়। এই ঘটনায় ওই কর্মকর্তা বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানে একটি মামলাও করেছেন। এরপর থেকে মামলার তিন আসামী পলাতক রয়েছে।
কিন্তু স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অন্যের দোষে কেন তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে? বকেয়া না থাকা সত্বেও তারা চার দিন বিদ্যুৎহীন হয়ে দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেল ১ টা ৪৫ মিনিটের দিকে শ্রীপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান রানা শ্রীকোল গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ কাটতে যান। তখন স্থানীয়রা লাইনম্যান রানার উপর চড়াও হলে তিনি অফিসে ফিরে যান। এবং বিষয়টি শ্রীপুর পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রাহাতকে জানান। বিষয়টি শোনার পর তিনি ওই লাইনম্যানকে নিয়ে বিকেল ৩ টা ৪৫ মিনিটের দিকে শ্রীকোল গ্রামে উপস্থিত হলে স্থানীয়দের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের মারধর ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার জেরে একই বাড়ির আকিদুল,আজাদুর ও মোকাদ্দেস মোল্লার নামে মামলা করেন ওই ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার।
এরপর থেকে ওই অভিযুক্ত গ্রাহকের বিদ্যুতের মিটারও খূলে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বিদ্যুতের খুটি থেকে যন্ত্রপাতি (ফেস) খুলে নিয়ে যায়। ফলে ওই ফেসের আওতায় থাকা ২৫ টি পরিবার বিদ্যৃৎহীন হয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সহ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।
শিউলি বেগম নামে গৃহিনী বলেন, আমার চাচা ব্রেই স্ট্রোকের রোগী। ফ্যান ছাড়া কান্নাকাটি করছেন। আমাদের বকেয়া কোন বিল নেই। অথচ কারা গন্ডগোল করলো, তার জন্য আমাদের চরম ভাগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
স্থানীয় বকুল হোসেন বিশ্বাস জানান, আমাদের কোন বকেয়া বিল নেই। অন্য কেউ গন্ডগোল করলে, মামলা খেলে তার দায়ভার তো আমাদের উপর দেওয়া ঠিক না। আমাদের কি অপরাধ। গায়ের জোরে এটা করা হয়েছে। ক্ষমতা দেখানোর জন্য যদি করা হয় তাহলে সেটা খুব অন্যায়।
করুন দিন কাটাচ্ছেন দরিদ্র ভ্যান চালক সেলিম তিনি জানান তার ভ্যান চার্জে চলে। এই কদিন বিদ্যুৎ নেই বলে তিনি ভ্যান চালাতে পারেনি। বাজার ঘাট ঠিক নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ তার কোন বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নেই।
ভুক্তভোগী একাধিক পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা ফ্রিজে যা কোরবানীর মাংস থেকে শুরু করে মাছ রেখে ছিলেন সব নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় বাচ্চারা লেখাপড়া করছে না। বুধবার থেকে সবার স্কুল খোলা। অনেকের পরীক্ষা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বিএম সাহাবুদ্দিন সিহাব জানান, যারা হামলা করলো। তাদের দোষ থাকলে তা বিচার হবে। কিন্তু এর জন্য ২৫ টি পরিবারে প্রায় শতাধিক মানুষ বিদ্যুৎহীন থাকবে রাগের চোটে এটা তো ঠিক নয়। আমি বিদ্যুৎ অফিসে যোগােযোগ করেছি। তারা কোন আশ্বাস দেয়নি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনালের ম্যানেজার মো. রাহাত মুঠোফোনে জানান, যারা আমাদের উপর হামলা করেছে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এমনকি তাদের মিটারও তুলে আনা হয়েছে। এরকম শাস্তি না দিলে ওখানে কাজ করাটাও তো কঠিন হয়ে যাবে। আর তাদের যে বিদ্যুৎ ফেস তা তুলে আনার ফলে কিছু পরিবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। যা হামলার তদন্তের স্বার্থে করা হয়েছে। হামলার সাথে আর কারা জড়িত তা না নির্দিষ্ট করে সবাইকে লাইন দেয়া যাচ্ছে না। বকেয়া না থাকলে এভাবে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোন আইন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।