মাগুরানিউজ.কমঃ
সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা অচল হয়ে পড়ে শ্রীপুরের আলমসার গ্রামের বাসিন্দা হালিম মিয়ার (৪০)। তিনি আজ পর্যন্ত কোন সরকারি সাহায্য পাননি। চলাফেরা করার জন্য পাননি একটি হুইলচেয়ারও।
মহম্মদপুরের এনামুল শেখ বধির। পোলিও আক্রান্ত আব্দুস সালামের ছোট বেলা থেকেই হাত দু’টি অকেজো। সকলেরই অবস্থা একই রকম। শুধু তারা নন, মাগুরার চারটি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ প্রতিবন্ধী আর্থিক অনুদান বা সরঞ্জাম পাচ্ছেন না। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
প্রতিবন্ধীদের বিষয়গুলো দেখভাল করে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। বরাদ্দ না থাকায় তাদের সহযোগিতা করা যাচ্ছে না বলে অফিস সূত্র জানায়।
দুই বছর আগে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করার জন্য আর্থিক সাহায্য ও সরঞ্জাম বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিবন্ধীদের হাতে সে সব প্রায় কিছুই পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ আছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের চারটি কার্যালয় রয়েছে। জেলা সদরে এই দফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় রয়েছে।
সমাজসেবা অধিদফতর থেকে প্রতিটি এলাকায় প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা কত, তাদের কী কী সরঞ্জাম লাগতে পারে, তার তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী দুই বছর আগেই জেলা সমাজকল্যাণ দফতর থেকে তথ্য-পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছিল।
প্রতিবন্ধীদের জন্য ট্রাই সাইকেল, কানে শোনার যন্ত্র, কৃত্রিম অঙ্গ, হুইল চেয়ার দেওয়ার কথা ছিল। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করতে অথবা ছোটখাটো কুটিরশিল্পের কাজে যুক্ত করতে ১০ হাজার করে টাকা অনুদান দেওয়ারও কথা ছিল। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার সরঞ্জাম বিলির পরিকল্পনা করা হয়।
কিন্তু অভিযোগ, দুই বছর ধরে প্রতিবন্ধীদের সরকারি সাহায্য পাওয়া প্রায় বন্ধ। ফলে তারা সমাজসেবা কার্যালয়ে ঘুরেও কোন ফল পাচ্ছেন না। যাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছিল, তাদেরই আগ্রহ বেশি। কিন্তু বার বার সরকারি অফিসে ঘুরেও তাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।
জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকার প্রতিবন্ধীরা বেশিরভাগই দু:স্থ পরিবারের। অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ ভিক্ষা। ফলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বেশির ভাগই কিনতে পারেন না তারা।
এ বিষয়ে মহম্মদপুরের বেসরকারি প্রতিবন্ধী সংস্থা এডিডি বাংলাদেশের সভাপতি মন্নু মিয়া বলেন, ‘আমাদের নিয়ে কেউ ভাবনা-চিন্তা করে না। বিভিন্ন উপজেলায় সমাজসেবা অধিদফতরে আর্থিক অনুদানের আবেদন করা হলেও তা বছরের পর বছর পড়ে আছে। অনুমোদনই মিলছে না।’
এ বিষয়ে মাগুরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদফতর থেকে যে সমস্ত নামের তালিকা আমার কাছে পাঠানো হয়, তা আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিই। আমার এখানে কোনও প্রকল্পের টাকা বা সরঞ্জাম পড়ে নেই।’
তিনি জানান, প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন ভাতা, সহযোগিতা, সরঞ্জাম এমনকি ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে।