মাগুরানিউজ.কমঃ
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা মধুমতি নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ডোবা ও জলাশয়। এ ছাড়া চরাঞ্চলের ৫টি পয়েন্টে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে হাজার হাজার একর কৃষি জমিসহ হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী জনপদ।
নদী তীরবর্তী উপজেলার সীমান্ত কালিশংকরপুর থেকে উত্তরে চরসেলামতপুর পযন্ত ২০টি গ্রাম রয়েছে। ফরিদপুর সীমান্তে অবস্থিত মহম্মদপুর উপজেলাধীন এসব গ্রাম মূল ভূখন্ড থেকে মধুমতি নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এসব গ্রামগুলো হচ্ছে উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝামা, আড়মাঝি, দেউলি, যশোবন্তপুর, কালিশংকরপুর, সদর ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া, গোপালনগর, কাশিপুর ধুলজুড়ি, মুরাইলপশ্চিমখন্ড, রায়পাশা, ভোলানাথপুর, রুইজানি,পাচুড়িয়া বাবুখালী ইউনিয়নের চরসেলামতপুর এবং মাধবপুর। এসব গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা চর কেন্দ্রীক।
নদী বিচ্ছিন্ন জনপদের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে প্রতিকারের আসায় ঘুরলেও কোন ফল পাচ্ছেন না। প্রশাসনের সামনে দিয়ে ২/৩ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে পাইপ বসিয়ে উপজেলা শহরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্রতিদিন ভরাট করে চললেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দেখার কেউ নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এলাকার সচেতন মহল। স্থানীয় প্রতক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এলাকার প্রভাশালী একটি মহল খুলনা ও বরিশাল থেকে এসব ড্রেজার মেশিন ট্রলারসহ ভাড়া করে এনে দিনের পর দিন নদী গর্ভ থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক বালু এসব পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করা হয়। প্রতি ট্রাকে গড়ে ২০০ঘনফুট বালু ধরে। এক ট্রাক বালু বিক্রি হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৩ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছেন এসব প্রভাবশালীরা।
উপজেলা সদরের চর জাঙ্গালিয়া, চর গোপাল নগর, চর রুইজানি পলাশবাড়িয়ার ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর এবং বাবুখালির চরসেলামতপুর গ্র্রামের মধুমতি তীরের ৫টি পয়েন্টে অবৈধ বালু তোলার ধুম পড়েছে। শ্যালোইঞ্জিন চালিত ড্রেজার ও শ্রমিক দিয়ে বালু কেটে ট্রাক, ট্রাক্টর, নসিমন-করিমন, আলমসাধু, ভটভটি ও ভ্যান যোগে ফরিদপুর ও মহম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় পৌছে যাচ্ছে।
দিন রাত সমানে বালু উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মধুমতি নদীর এসব পয়েন্ট থেকে বালু তোলা হচ্ছে।
সরকার বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে ইজারা না দিলেও অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের মদদ দাতা ও সুবিধাভোগী হিসেবে এলাকার ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
নদী তীরবর্তী গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ও ধোয়াইল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, চর জেগে উঠা পৈত্রিক জমিতে আমরা বিভিন্ন ফসলের আবাদ করি। কিন্তু এ বছর ভূমিদস্যুরা জোর করে আমাদের ফসলি জমি থেকে শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন শতশত ট্রাক মাটি ও বালু কেটে নিয়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।