মাগুরানিউজ.কমঃ
কিছুদিন আগেও গ্রামাঞ্চলের লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে। মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল এ খেলা। দুর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত এ খেলা দেখার জন্য। কিন্তু
আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ খেলা।
জানা যায়, বৈশালী, পাশের বাড়ি, পিরিপাইট, বেনিয়ম, মৃত্যুবাড়ী এরকম নানা রকমের লাঠি খেলা গ্রাম বাংলায় এক সময় ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
শারীরিক কসরত প্রদর্শন ও নিজেদের আত্মরক্ষার্থে বহুকাল থেকে এ লাঠি খেলার প্রচলন। একজন ওস্তাদের নির্দেশে কখনো একক ভাবে কখনো দুই দলে ভাগ হয়ে আবার কখনো সবাই একত্রে এই লাঠি খেলা দেখানো হয়।
মাগুরার গ্রামে-গঞ্জে দীর্ঘদিন থেকে এ খেলা চলে এলেও বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মাঝে এ লাঠি খেলা দেখা গেলেও তা ক্ষনিকের জন্য। খেলাটি দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার ফলে এর খেলোয়াড় সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না নুতন খেলোয়াড়। আর পুরনো অভিজ্ঞ
খেলোয়াড়রা অর্থাভাবে প্রসার করতে পারছেন না এ খেলা।
ফলেদিনে দিনে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। তাই নির্মল বিনোদনের খোরাক আর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এ লাঠি খেলাটি আর সচরাচর চোখে পড়ে না।
সম্প্রতি জেলার সদর উপজেলার ধলহরা চানপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি এ লাঠি ও ঢেঁকিখেলা। এর আগে এ মাঠেই লাঠি খেলার নানা কসরত দেখিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন সত্তোর্ধ্ব লাঠিয়াল আওয়াল সরদার ও সোহরাব সরদারসহ প্রায় ৫০ জন লাঠিয়াল।
চারদিকে যেখানেই দৃষ্টি দেয়া যাক না কেন মানুষ আর মানুষ। গাছে মানুষ, স্কুল ঘরের ছাদে মানুষ, ঘরের চালে এমনকি সুপরি গাছ বেয়ে উঠে জড়িয়ে ধরে সেখান থেকেও অপলক
দৃষ্টিতে দেখছে এদৃশ্য। ছেলে-বুড়ো-যুবক-মহিলা সকল শ্রেণীর হাজার মানুষের সামনে ১০০ কেজি ওজনের ঢেঁকিটিকে অনায়াসে নানা ভঙ্গিতে ঘুড়িয়ে উপস্থিত জনতাকে রীতিমত বিমোহিত করে তোলেন পঞ্চাশোর্ধ চুন্নু খান। এরপর ঢেঁকি নিয়ে মাঠটি ১০০ বার প্রদক্ষিণ করেন তিনি। ধান ভানতে বা চিরে কুটতে গ্রাম বাংলায় ব্যবহৃত বিশালাকার এ ঢেঁকি নিয়ে এ ধরণের আয়োজন দেখে নবীন প্রজন্মের অনেকেই রীতিমত বিস্মিত হয়ে পড়েন। বয়স্করা হয়ে পড়েন স্মৃতি কাতর।
খেলোয়াড় নির্মল সাহা, বিকাশ চন্দ্র, এনতাজ আলী, মনসুর আলী বলেন,অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ খেলা জানা থাকলে শত্রু পক্ষের হাত থেকে খালি হাতেও বে্ঁচে আসা সম্ভব।
তাছাড়াও শারীরিক কসরতের এ খেলাটি একটি অন্যতম ব্যায়াম। এ খেলার মাধ্যমে শরীর ও মন সতেজ থাকে। অবিলম্বে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এ খেলাগুলো চালুর দাবি বিনোদন প্রত্যাশীদের।