রোববার (২২ জুন) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রধান সহযোগী গণেশ ঘোষের ১১৪তম জন্মদিন।
বিংশ শতাব্দীতে ভারত উপ-মহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় ও যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তাতে চট্টগ্রামের মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী দল অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ আন্দোলনে চট্টগ্রামের যেসব কিংবদন্তী বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাদের মধ্যে গণেশ ঘোষ অন্যতম।
বিপ্লবী এই নেতা ১৯০০ সালের ২২ জুন মাগুরার বিনোদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিপিন বিহারী ঘোষ ছিলেন চট্টগ্রামের রেল কর্মচারী। স্কুলে লেখাপড়া চলাকালে গণেশ ঘোষ সহপাঠী অনন্ত সিংয়ের মাধ্যমেই মাস্টাদা সূর্যসেনের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মির জিওসি।
বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবীরা প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার দখলের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। গণেশ ঘোষ ছিলেন এই অভিযানের ফিল্ড মার্শাল। রাত সোয়া ১০টায় মিনিটে বিপ্লবী দল আঘাত হানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগারে।
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন তারা। বিপ্লবীরা একের পর এক অতর্কিত আক্রমণ করে সরকারি অস্ত্রাগার, টেলিফোন কেন্দ্র, টেলিগ্রাফ ভবনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অধিকার করে নেন।
বিপ্লবী গণেশ ঘোষ জীবনের অধিকাংশ সময় জেল অথবা আত্মগোপনে থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তিনবার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর তিনি ১৯৬৭ সালে ভারতের লোকসভায়ও সদস্য নির্বাচিত হন। আজীবন অকৃতদার এ বিপ্লবী কখনো নিজের জন্য চিন্তা করেননি।
প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে তার স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। গণেশ ঘোষের স্মৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।
গণেশ ঘোষের নামে বিনোদপুর গ্রামের একটি সড়ক বা পাঠাগারের নামকরণের দাবি জানান স্থানীয় ডা. রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
এ প্রসঙ্গে মাগুরা জেলা উদীচীর সহ-সভাপতি এবিএম আসাদুর রহমান জানান, বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ বিশেষ করে বাংলা একাডেমীর চরিতাবিধানে গণেশ ঘোষের মতো বিপ্লবীর বীরত্বগাথা তুলে ধরা উচিত।
এদেশে গণেশ ঘোষের একমাত্র উত্তরসুরি দিনবন্ধু ঘোষ বলেন, আমার পিতামহের ছোটভাই গণেশ ঘোষের ব্যাপারে অনেক শুনেছি। দেশের জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। দেশের কথা চিন্তা করে পৈত্রিক ভিটার মোহ ত্যাগ করেছিলেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের পরিবারটি অত্যন্ত দৈন্য দশার মধ্য দিয়ে চলছে।তাই আমাদের পক্ষে তার পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় সাহায্য সহযোগিতা পেলে গণেশ ঘোষের পৈত্রিক ভিটাটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো।
এ প্রসঙ্গে মাগুরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মলয় চৌধুরী বলেন, বিপ্লবী গণেশ ঘোষের মতো মানুষেরা নতুন প্রজন্মের কাছে দেশ প্রেমের মূর্ত প্রতীক। তাই তার স্মৃতিকে অম্লান রাখতে স্থানীয় যেকোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করবে জেলা পরিষদ।
গণেশ ঘোষ ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর মারা যান। সুত্র ;বাংলানিউজ.কম