মাগুরানিউজ.কমঃ
শিশুরা সুন্দর। শিশুরা নিষ্পাপ। শিশুরা ফুলের মতো। প্রতিটি শিশুই ফুলের মতো ফুটবার এবং সুন্দররূপে বিকশিত হবার দাবি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু সম্পদের অসম বণ্টন ও সামাজিক অসংগতির শিকার হচ্ছে অনেক শিশু। যাদের কচি হাত হয়ে ওঠে শ্রমের হাতিয়ার।
আজ ১২ জুন, বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস। শিশু অধিকার সুরক্ষা ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন ২০০২ সালে বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য এই দিবসটি ঘোষণা করেছিল আন্তর্জাতিক শিশু শ্রমবিরোধী দিবস।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে লক্ষ লক্ষ শিশু কল-কারখানা, হোটেল রেস্তোরাঁ, ঘর বাড়িতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। শৈশবের আনন্দ, মাতা-পিতা পরিবার পরিজন থেকে স্নেহ বঞ্চিত শিশুদের কোথাও কোথাও আইন লঙ্ঘন করে অমানবিক পীড়ন করার ঘটনা আকছার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্তরে তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দেশের শিশু শ্রম বন্ধ করার আইনের ফাঁক দিয়ে একশ্রেণির মানুষ অবাধে শিশুদের দিয়ে কম মজুরিতে কাজ হাসিল করছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকরা প্রায় ৩৪৭ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৪৭ ধরনের কাজকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কাজে নিয়োজিতদের অধিকাংশই পথশিশু। শুধু একবেলা খাবার জোগাড় করতে এ পথশিশুরা দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। পথশিশুদের ৬৯ শতাংশই কোনো না কোনো শিশুশ্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পারিবারিক ও আর্থসামাজিক কারণে ৬ থেকে ৭ বছর বয়সেই বাংলাদেশের শিশুরা জীবনধারণের জন্য শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১৩ লাখ শিশু, যা মোট শিশু শ্রমিকের ৪১ শতাংশ।
বছর ঘুরে বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধ দিবস আসে, চলেও যায়। শিশুশ্রম বন্ধ হয় না। বরং দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশুদের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রে যদি শিশুদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করতে না পারা যায়, তাহলে তার প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর পড়বে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন এবং এটাই এখন একমাত্র কাজ।