মাগুরানিউজ.কমঃ
মাগুরা সদরের হাজিপুর ইউনিয়নের আরালিয়া গ্রামের এক প্রভাবশালী তার জমি থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন। আর এই বালুর একটি অংশ ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের জমিতে। কারো কারো জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বহু হেক্টর জমির চাষাবাদ।
অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিন নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ওলামা লীগের নেতা হিসেবে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ওলামা লীগে ওই নামের কোনো নেতা আছেন বলে তার জানা নেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী ওলামা লীগ নেতা পরিচয়দানকারী ফরিদ উদ্দিন আরালিয়ায় পুকুর খননের নামে তার প্রায় চার একর জমিতে কমপক্ষে ৩০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে মাটি খুঁড়ে বালু উত্তোলন করছেন। পরে এই বালু ওই জমিতে স্তূপাকারে রেখে বিক্রি করছেন। স্তূপাকার রাখা বালু বৃষ্টি ও বাতাসে অন্যের ধান, পাট ইত্যাদি ফসলের ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে নানা সমস্যা তৈরি করছে। বিনষ্ট করছে মাটির গুণ।
এ ছাড়া খনন করা পুকুরের পাড় ভেঙে পাশের অন্যের আবাদি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি ওই সব জমির স্বাভাবিক পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ বেশি লাগছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আরালিয়া মাঠে তিন শতাধিক কৃষকের শতাধিক একর জমি রয়েছে, যেখানে ধান, পাটসহ নানা ফসলের আবাদ হয়।
কৃষক ফিরোজ অভিযোগ করেন, বৃষ্টিতে এই বালু নেমে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেতে ঢুকে পড়ছে, যা জমির উর্বরাশক্তির জন্য হুমকি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে অতীতে আমরা কৃষি বিভাগসহ নানা দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এ কারণে ফরিদ উদ্দিন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। ফরিদ নিজেকে আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সহ-সভাপতি দাবি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন।
এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, মাঠের মাঝখানে গভীর গর্ত খুঁড়ে বালু উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে তাদের জমিতে সেচ আগের তুলনায় বেশি লাগছে। বাড়ছে ফসলের উৎপাদন খরচ।
এলাকার আরেক কৃষক আবু তালেব জানান, তার দুই একর জমি খনন করা পুকুরের পাড়ে হওয়ায় যেকোনো সময় এটিতে ভাঙন দেখা দিতে পারে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদ উদ্দিনকে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া স্তূপকৃত বালু দ্রুত সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেটি মানছেন না।’
কৃষি কর্মকর্তা জানান, ওই মাঠের মাটি এঁটেল ও দোঁআশ। সেখানে বালুর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। স্তূপকৃত করে রাখা বালু বৃষ্টিতে ধুয়ে আশপাশের জমিতে মিশে বালুর মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে সেখানে ধান, পাট-জাতীয় যে ফসলের আবাদ হয়, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি নিজেকে ওলামা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দাবি করেন।
হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


