বোরোতে চাল উৎপাদনে রেকর্ডের হাতছানি

নিউজ ডেস্ক-

দেশে বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে মোট উৎপাদিত চালের ৫৫ ভাগের বেশি আসে বোরো মৌসুম থেকে। তাই খাদ্য নিরাপত্তায় এই মৌসুমকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় সরকার। নানা প্রণোদনা কর্মসূচির পাশাপাশি বাজারে ধান ও চালের চড়া দামের কারণেই বোরো আবাদে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার দেশে বোরো ধানের আবাদ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছর বোরো চাল উৎপাদনেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, চলতি মৌসুমে মোট ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টন। চাষ করা হচ্ছে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশে এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে ১৪ লাখ হেক্টর, উফশী জাতের ধান ৩৬ লাখ

হেক্টরের বেশি এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হবে শূন্য দশমিক ১৭৬ লাখ হেক্টর জমিতে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৭২ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই কোটি নয় লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর বোরো মৌসুমে সফলভাবে ধান ঘরে উঠানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ আকস্মিক বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে হাওরের ধান ঠিকমতো ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আতঙ্কে থাকতে হয় কৃষকদের।

বোরো ধানের আবাদ : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর মোট ৪৯ দশমিক ৯৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩.৩০০ লাখ হেক্টর জমি, আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ১৪.০৪১ লাখ হেক্টর, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫.৬৩৬ লাখ মেট্রিক টন; উফশী ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬.৩০০ লাখ হেক্টর জমি, আবাদের অগ্রগতি ৩৫.৭৮৯ লাখ হেক্টর, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৪৯.৩৭৫ লাখ মেট্রিক টন; স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ০.১৭৬ লাখ হেক্টর জমি, আবাদের অগ্রগতি ০.১৬৯ লাখ হেক্টর, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ০.৩২৬ লাখ মেট্রিক টন।

হাওরাঞ্চলে পৃথক লক্ষ্যমাত্রা : চলতি মৌসুমে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় বোরোর পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে হাওরে রয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার এবং নন-হাওর এলাকায় হচ্ছে দুই লাখ ৩১ হাজার হেক্টরের বেশি জমি। এবার হাওরে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হচ্ছে এক লাখ ৯২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। উফশী জাতের ধান রোপণ হচ্ছে চার লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বাকি শূন্য দশমিক ০৩৮ লাখ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে স্থানীয় জাতের ধান।

বোরো আবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এ বছর বোরো আবাদের জমির পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল জাত, হাইব্রিড এবং আগাম আসে এমন জাতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের আগাম জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান- বিশেষ করে ৬৭ ও ৯৭ এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি।

দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৮ সাল থেকে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ শুরু হলেও আবাদের পরিধি বেড়েছে বিগত ছয় বছরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে যেখানে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছিল ছয় লাখ ৬০ হাজার ৫৬৩ হেক্টর জমিতে; সেখানে ছয় বছরের মাথায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিধি বেড়ে ১৪ লাখ হেক্টর ঠেকেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৩৬ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমে সেটা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কবির বলেন, কৃষক সঠিকভাবে চাষাবাদের পদ্ধতি অনুসরণ করলে হাইব্রিড ধান ইনব্রিড জাতের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি ফলন দেয়। হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধির পেছনে এটি একটি বড় কারণ। এ ছাড়া হাইব্রিড ধানের সরু চাল বাজারে ভালো দামে বিক্রি হওয়ার কারণে কৃষক চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

September ২০২৩
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Aug    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

ফেসবুকে আমরা

বিভাগ

দিনপঞ্জিকা

September ২০২৩
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Aug    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
%d bloggers like this: