মধুমতির বিস্তীর্ণ চরে বাদাম বিপ্লব

 

মধুমতি নদীর পূর্বপাশে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। ধূসর বালি ফুঁড়ে বের হয়ে এসেছে এই সবুজ। নয়নাভিরাম এ সবুজের যেন কোন শেষ নেই। চরের বাদাম যে, সবুজ প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে তা দেখা যাবে মহম্মদপুর উপজেলার পূর্বনপাশ দিয়েপ্রবাহিত মধুমতি নদীর পাড়ে গেলে।দিগন্ত বিস্তৃত এই চরে শত শত কৃষক হাজার হাজার বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনেও বিপ্লব ঘটিয়েছে।

140624-mohammadpur_350_194মাগুরানিউজ.কম:  মধুমতি নদীর পূর্বপাশে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। ধূসর বালি ফুঁড়ে বের হয়ে এসেছে এই সবুজ। নয়নাভিরাম এ সবুজের যেন কোন শেষ নেই। চরের বাদাম যে, সবুজ প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে তা দেখা যাবে মহম্মদপুর উপজেলার পূর্বনপাশ দিয়েপ্রবাহিত মধুমতি নদীর পাড়ে গেলে।

দিগন্ত বিস্তৃত এই চরে শত শত কৃষক হাজার হাজার বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনেও বিপ্লব ঘটিয়েছে। উপজেলার ১০ হাজার নদী ভাঙন কবলিত কৃষক সর্বস্ব হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর  জীবনযাপন করে আসছিলো। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা না থাকায় সীমাহীন দুঃখ-দুর্শশায় কেটেছে তাদের দিন।

 

মধুমতির বুকে জেগে ওঠা বিস্তীূর্ণ চর তাদের আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এসব চরে বাদাম চাষের কারণে নদীভাঙ্গা মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি।পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে তাদের  জীবনযাত্রায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে চরে তিন হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে এখন বাদামসহ নানা ফসলের চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে।যা উপজেলার মোট উঁচু আবাদি জমির প্রায় অর্ধেক। মহম্মদপুর উপজেলার পূর্ব সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদী মধুমতি  ষাটের দশকে লোকালয়ে প্রথম আঘাত হানে। মধুমতি নদী তীরবর্তী উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত কালিশংকরপুর থেকে উত্তর সীমান্তে চরছেলামতপুর পর্যন্ত প্রায় ২০টি গ্রামে শুরু হয় ভায়াভহ নদী ভাঙ্গন। এতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ হাজার হাজার একর ফসলী জমি নদীতে বিলিন হয়ে যায়। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয় অসংখ্য পরিবার। আশির দশক থেকে মধুমতির বুক জুড়ে উঠতে থাকে বিস্তীর্ণ চর।এই দুর্গম চরে ক্রমে পলি পড়ে ফসল চাষের উপযোগি হয়ে হঠে। এবং দিশেহারা কৃষক সেখানকার বালুময় জমিতে ফসল ফলাতে শুরু করে। ধু ধু সেই বালূ চরে ঘটে যায় সবুজ বিপ্লব।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুমতি তীরবর্তী উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝামা, আড়মাঝি, দেউলী, যশোবন্তপুর, কালিশংকরপুর, সদর ইউনিয়নের জাঙ্গালীয়া, কাশিপুর, ধুলজুড়ী, মুরাইল, রায়পাশা, ভোলানাথপুর, পাচুড়িয়া, রাইজানী, দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা, শিরগ্রাম, সিন্দাইন, চিত্তবিশ্রাম, চরপাড়া, বাবুখালী ইউনিয়নের চরছেলামতপুর সহ প্রায় ২৫টি গ্রামে জেগে উঠা চরে এখন অর্থকরী ফসল বাদামের আবাদ হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে বাদাম।

 

প্রতি বছর এসব এলাকা থেকে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার মণ বাদাম উৎপন্ন হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। পানি আটকে থাকেনা এমন দোআঁশ মাটিতে বাদাম চাষ ভাল হয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের পর নদীর পানি হ্রাস পেলে চর জাগে। অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকরা বাদামের বীজ রোপণ করে এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে বাদাম উত্তোলন করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৫-৬ কেজি বাদাম বীজ রোপণ করতে হয়। এ চাষে সেচ ও সারের তেমন প্রয়োজন হয় না।

 

এক বিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত বাদাম উৎপাদন হয়। ইতমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার গুলোতে নতুন বাদাম উঠতে শুরু করেছে।

 

শ্রেণী ভেদে প্রতি মণ বাদাম ২৫০০থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানী বাদাম দিয়ে নানা খাদ্য পণ্য তৈরী করে বাজার জাত করায় বাদামের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। কৃষক পাচ্ছে নায্য মূল্য। উপজেলার ঝামা গ্রামের আছাদুজ্জামান, হরেকৃষ্ণপুরের মন্টু মিয়া, আড়মাঝি গ্রামের আজিজার রহমান ও দেউলী গ্রামের আব্দুল হামিদ ও দাউদ মোল্যা বাদাম চাষ করে নিঃস্ব থেকে এখন স্বচ্ছল কৃষক। শুধু এরাই নয় এ বাদাম উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতা ও বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন।

 

বাদাম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাদাম চাষে সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে নানা সমস্যা। বীজ সংকট বাদাম চাষের প্রধান সমস্যা। চাষিরা স্থানীয়ভাবে দেশি পদ্ধতিতে বাদাম বীজ সংরক্ষণ করায় অনেক সময় ভাল ফলন পাওয়া যায় না। চরাঞ্চল হওয়ায় বাদাম চাষে কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও তেমন পরামর্শ পাওয়া যায় না বলে কৃষকরা অভিযোগ করে।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন আহম্মদ জানান, উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চালে অর্থকরী ফসল বাদামের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় দিন দিন এ ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষক।নদী বিচ্ছিন্ন হলেও বাদাম চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

October ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Sep    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

ফেসবুকে আমরা

বিভাগ

দিনপঞ্জিকা

October ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Sep    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
%d bloggers like this: