মাগুরানিউজ.কমঃ
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। আজ এই শিল্পীর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে শিল্পাচার্যকে মাগুরাবাসীর ও মাগুরা নিউজের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্রকৃতি ও মানবদরদী শিল্পী জয়নুল ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে আর্ট কলেজ থেকে শিল্পকলা বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে সেখানেই শুরু হয় তার শিক্ষক জীবন। ১৯৪৮ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব বাংলায় আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। শুদ্ধ ও সুস্থ শিল্পচর্চা অব্যাহত রাখতে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ছাত্রজীবনে জয়নুল আবেদিন কঠোর পরিশ্রমী এবং মেধাবী ছিলেন। ৫ম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অধ্যক্ষ মুকুল দে তাকে আর্ট স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ছাত্রাবস্থাতেই অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান জয়নুল আবেদিন। ১৯৩৮ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিন বছরে বৃত্তি পেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য তা স্থগিত হয়ে যায়।
১৩৪৯ সনে দুর্ভিক্ষের সময় রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের ছবি ও স্কেচে জয়নুলের ক্যানভাস এতটাই মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে যে, বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। মূলত এরপর থেকেই তার শিল্পীখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।১৯৭০ সালে জয়নুল আবেদিন ‘নবান্ন’ শিরোনামে এক দীর্ঘ ছবি আঁকেন। সেই ছবি যেন গ্রামবাংলার চিরায়ত জীবনের প্রতিচ্ছবি। সে বছরই দেশে ঘটে যায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। প্রকৃতির সেই ধ্বংসলীলা তার হৃদয়ে নাড়া দেয়। তিনি আঁকেন ‘মনপুরা ৭০’। এই চিত্রকর্মগুলো আজও বিস্ময় হয়ে আছে।কেননা তার আঁকা চিত্র শুধুমাত্র ছবি নয়, বরং ইতিহাসের এক একটি স্মরণীয় অধ্যায় যেন তুলির আঁচড়ে ধরে রেখেছেন তিনি।
কর্মজীবনে জয়নুল আবেদিন বহু ইলাস্ট্রেশন এবং প্রচ্ছদ এঁকেছেন। কম খরচে ছাপার জন্য রঙের নানা রকম প্রয়োগ তার ছবিতে পাওয়া যায়। চল্লিশের দশকে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পরবর্তী মৌলিক চিত্রকর্মগুলোতে। সেই চিত্রকর্মগুলো ক্রমেই বাহুল্যবর্জিত, জটিলতা মুক্ত ও রেখাপ্রধান হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে ১৯৪৩ সালে আঁকা তার সিরিজ চিত্রকর্ম- দূর্ভিক্ষ।
১৯৭২ সালে জয়নুল আবেদিন বাংলা একাডেমির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন তিনি। কেননা সে বছর তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপদেষ্টা মনোনীত হন। শুধু তাই নয, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অসাধারণ শিল্প-প্রতিভা এবং মহৎ মানবিক গুণাবলির জন্যে তিনি দেশে ও বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশে চারুকলার উন্নয়নে জয়নুল আবেদিন তার অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘শিল্পাচার্য’ সম্বোধনে। এই মহান শিল্পী ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা আর্ট কলেজ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হয়।