মাগুরানিউজ.কমঃ
কোনো জিনিস ব্যবহারের পর তার উচ্ছিষ্টাংশ সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই উচ্ছিষ্টাংশ দিয়েই তৈরি হচ্ছে দামি ও দৃষ্টিনন্দন অনেক ব্যবহার্য পণ্য। যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে নারিকেলের মালা (খোল)। নারিকেলের মালা দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে এমন কিছু শিল্পকর্ম, যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
বিভিন্ন আকারের শোপিস, ফুলদানি, একতারা, সিগারেটের অ্যাশট্রে, শিশুর খেলনা থেকে শুরু করে অনেক রকম পণ্য তৈরি হচ্ছে নারিকেলের মালা দিয়ে। তবে নারিকেলের মালার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পোশাক শিল্পে। নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে জামা ও টি-শার্টের নানা আকারের বোতাম। এসব বোতাম ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ছোট কুটির শিল্প থেকে রাজধানীর বড় বড় গার্মেন্ট কারখানায়। আর নারিকেলের বোতামের জামা ও টি-শার্ট রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ফলে নারিকেলের মালা এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত হয়েছে।
এ শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, নারিকেলের মালার ব্যবহার দিনদিন এতটাই বাড়ছে যে অল্প দিনের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র কুটির শিল্পে রূপ নেবে।
মাগুরার সদর উপজেলার বরুণাতৈল গ্রামের কারুশিল্পী আবদুল হান্নানের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন ফুটপাতে। নারিকেলের তৈরি বিভিন্ন কুটির শিল্প এখানকার খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করেন তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারিকেলের মালা সংগ্রহ করে তিনি তৈরি করেন এসব কুটির শিল্প। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলাতে তিনি এসব পণ্য সরবরাহ করে থাকেন।
তিনি জানান, নারিকেলের পরিত্যক্ত অংশ মালা ব্যবহার করে অনেক রকম পণ্যই তৈরি হয়। তবে এখন বেশি তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন আকারের বোতাম। চমত্কার এসব বোতাম ব্যবহূত হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্ট ফাক্টরিতে। চাহিদাও বেশ। যেসব জামা বিদেশে রফতানি হয় তাতেও এ বোতাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি আরব আমিরাতে ৫০ লাখ পিস বোতাম রফতানি করা হয়েছে।
আবদুল হান্নান জানান, ২০০৬ সালে এ শিল্পের কাজ শুরু করেন তিনি। বোতাম তৈরির মেশিন রয়েছে ২৫টি। মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা সাতাশ এবং পুরুষ শ্রমিক ৮ জন। মহিলা শ্রমিকের মজুরি কম কিন্তু সার্ভিস ভালো। তারা সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান। পুরুষরা পান ১২০ টাকা। তিনি আরও জানান, এ শিল্পের কাঁচামাল আনতে হয় বাগেরহাট জেলা থেকে। এক হাজার পিস মালা বা খোলা কিনতে ব্যয় হয় দু’হাজার টাকা। এ পরিমাণ কাঁচামাল থেকে তৈরি হয় প্রায় দুই লাখ পিস বোতাম। প্রতি হাজার পিস বোতাম প্রকারভেদে বাজারে বিক্রি হয় তিনশ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
কারখানার যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি মাসে আবদুল হান্নানের থাকে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। তিনি বিনিয়োগ করেছেন মাত্র দেড় লাখ টাকা। এদিকে হাইকোর্ট সংলগ্ন ফুটপাতের হস্তশিল্প বিক্রেতা আজাদ আবিদ বলেন, নারিকেলের মালার তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। এসব পণ্যের মূল্য নাগালের মধ্যে থাকায় সহজেই কিনতে পারেন ক্রেতারা।
তিনি জানান, গাছের ডালের মাথায় নারিকেলের মালা বসিয়ে যেসব শোপিস তৈরি করা হয় তার দাম রয়েছে ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছোট ছোট ফুলের টবের দাম ৬০ থেকে ১৫০ টাকা, সিগারেটের অ্যাশট্রে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, একতারা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং শিশুর বিভিন্ন খেলনার দাম রয়েছে ৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। অভিজাত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সব শ্রেণির ক্রেতাই এখানে আসেন এবং নারিকেলের মালার তৈরি পণ্য কেনেন।