পবিত্র রমজানে সুস্থ থাকতে যেমন হতে পারে আপনার খাদ্যাভ্যাস রজমান মাসে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সচেতন হতে হয়। একটু পরিকল্পনামত খাবার খেলে এ পবিত্র নেয়ামতের মাসকে উপভোগ করা যায়।ইবাদত বন্দেগীর মধ্য দিয়ে।
প্রতিদিন আমরা সাধারণত সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলা খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু রমজান মাসে আমরা সাধারণত শুধু সন্ধ্যা থেকে ভোর এই সময়ের মধ্যেই তিনবার খেয়া থাকি। রমজান মাসে খাবার যতটা পারা যায় অন্য মাসের মতোই স্বাভাবিক ও সাধারণ হওয়া উচিত। তবে রমজান মাসে খাদ্য তালিকায় যথাসম্ভব সস্নো-ডাইজেস্টিং খাবার বেশি রাখা উচিত। যেখানে সস্নো-ডাইজেস্টিং খাবার সাধারণত ডাইজেস্ট হতে প্রায় ৮-১২ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে দ্রুত-ডাইজেস্টিং খাবার মাত্র ২-৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাইজেস্ট হয়ে যায়। আঁশ বা ফাইবার প্রধান খাবারগুলোই সাধারণত সস্নো-ডাইজেস্টিং হয়ে থাকে। যেমন ঢেঁকি ছাটা চাল, আটা, সবুজ মটরশুঁটি, ছোলা, সবুজ শাক যেমন ডাটাশাক, পালং শাক, খোসাসহ ভক্ষণ উপযোগী ফল যেমন পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি এবং শুকনা ফল খোরমা, খেজুর ইত্যাদি তবে খাবার অবশ্যই সুষম হতে হবে অর্থাৎ খাদ্য তালিকায় দানাদার খাবারের সাথে পরিমাণমতো ফল, শাক সবজি, মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার থাকা আবশ্যক।
অধিক পরিমাণে মসল্লা সমৃদ্ধ গুরুপাক ও ভাঁজা-পোড়া তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ এবং ইফতারের পর অধিক পরিমাণে চা কফি বা কোলা গ্রহণের ফলে বুকে জ্বালা পোড়া বা পেটে গ্যাসের সমস্যা রমজান মাসের একটি কমন বা সাধারণ সমস্যা। তাই তেলে ভাঁজা পোড়া খাবার না খাওয়াই উত্তম। ইফতারে তেলে ভাঁজা খাওয়ার চেয়ে ওভেন গ্রিল্ড খাবার খেলে গ্যাস প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পায়। ইফতারে ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি একটা মজাদার খাবার। এ খাবারে কম-বেশি সবাই অভ্যস্ত। তাই এ ব্যাপারে সবারই একটু সতর্ক হতে হবে। অবশ্যই বেশি পরিমাণে খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে না। খেয়াল রাখুন এগুলো যেন প্রতিদিন নতুন তেলে তৈরি করা হয়। অল্প তেল ব্যবহার করুন এবং বাসি-পোড়া তেল পরিহার করুন।
ইফতারে লেবুর শরবত, ফল, বিশেষ করে খেজুর, ফলের সালাদ, শশা, টমেটো, গাজর, আপেল, আমড়া, আনারস, জাম্বুরা, পেয়ারা, পুঁদিনাপাতা, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, লবণ, বিটলবণ ইত্যাদিকে প্রধান্য দেয়া যেতে পারে। জিরা দিয়ে ফলের সালাদ করা যায়। থাকতে পারে হালিম, নুডুলস ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে ফিরনি অথবা দুধে ভিজানো চিড়া, সঙ্গে হালকা চিনি ও পাকা আমের টুকরো ইফতারে বৈচিত্র্য আনতে পারে।
সপ্তাহে এক দিন ইফতারে রাখুন হরেক রকম ভর্তাসহ ভুনা খিচুরি। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা ইফতারে পাকা পেঁপে ও ইসবগুল খেতে পারেন। তবে ইসবগুল ভিজিয়ে রাখবেন না। শুধু ইফতারেই নয়, ইফতারে পর থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করার বিষয়টি ভুলে যাবেন না। ইফতার পরবর্তী (সন্ধ্যা রাতের) খাবার বর্জন করতে চাইলে দুধ-কলা অথবা চিড়া-দই খেতে পারেন। সন্ধ্যা রাতের খাবারটা একটু কম খেলেই ভালো। ইফতারের সময় খোরমা-খেজুর, পেঁপে, তরমুজ, কলার পাশাপাশি হালিম খেলে দেহে অনেক শক্তি পাওয়া যায়। ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘন ঘন পানি পান করা ভালো। শরীরের পানি ঘাটতি পূরণের জন্য ঘরে বানানো তাজা ফলের রস বেশি কার্যকারী।
ইফতারের পর ডাবের পানিও খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের সময় কার্বনেটেড পানীয় যেমন কোকাকোলা জাতীয় পানীয় না গ্রহণ করাই উত্তম। কার্বনেটেড পানীয় পেটে গ্যাস প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। অতি চিনি সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়াই উচিত। বেশি চিনি সমৃদ্ধ খাবার পেশাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে দেহের অতি প্রয়োজনীয় মিনারেলগুলোও পেশাবের সাথে বের হয়ে যায় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ইফতারে আদা কুঁচি এবং স্প্রাউটেড ছোলা লবণ ছিটিয়ে খেলে এসিডিটি উপশম হয়।
ইফতারের পরপরই সন্ধ্যা রাতের খাবার খেয়ে নেয়া উত্তম। ভোর রাতের খাবার (সেহরি) গ্রহণের আগে যাদের ওষুধ খেতে হয় তারা কষ্ট করে একটু আগে ঘুম থেকে উঠে ওষুধ খেয়ে নিলে ভালো হয়। সেহরিতে পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। বেশি তেল চর্বির খাবার বর্জন আপনার শরীরে স্বাচ্ছন্দের কারণ হবে, আপনি আরাম বোধ করবেন। মাংসের পরিমাণটা কম করে নিন, মাছ ও শাক-সবজিকে প্রধান্য দিন। আর সেহেরিতে সস্নো-ডাইজেস্টিং খাবার খেলে দিনের বেলা ক্ষুধার প্রবণতা হ্রাস পায়। তবে সেহেরিতে ভরপেটে না খাওয়াই উত্তম। সেহেরিতে টক দই খেলে পেট ভার ভার মনে হবে না। সেহেরি খাওয়ার সাথে সাথে না শুয়ে, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ফজরের নামাজ আদায় করে অল্প সময় ঘুমিয়ে নেয়া উত্তম। তবে ডায়াবেটিক ও বস্নাডপ্রেসারে যারা ভুগছেন, আপনাদের অবশ্যই রমজান মাসের পূর্র্বেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সম্ভাব্য খাদ্য তালিকা করে নেয়া উচিত। আপাতদৃষ্টিতে একজন সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখায় কোনো বাধা নেই। তবে রমজানে ওষুধ?ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করে নেয়া উত্তম।