মাগুরানিউজ.কমঃ
পাট জাগ দেয়া ও ধোয়া নিয়ে মহাব্যস্ত মাগুরার চাষীরা। চলছে শ্রাবণ মাস। যখন তখন বৃষ্টি। ডোবা-নালা, পুকুর, খাল-বিল পানিতে ভরে গেছে। এরই মধ্যে পাট জাগ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মাগুরার হাজারো পাট চাষী। বৃষ্টির পানিতে পাট জাগের সুবিধা হওয়ায় একটু আগেভাগেই পাট ঘরে ঘরে তুলতে চাইছেন এলাকার কৃষকরা।
চলতি পাট মৌসুমে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিচ্ছেন। চাষিরা পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং হাটে-বাজারে বিক্রিসহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, নারী-পুরুষের অংশ গ্রহণে পাট ছাড়ানোর কাজ চলছে।
অনেক স্থানে খরচ বাঁচাতে রিবোন রেটিং পদ্ধতিতে আশ ছাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেও কৃষকরা তাতে আগ্রহ নয়। সনাতন পদ্ধতিতেই তাদের আস্থা। আর জেলার নদী, খাল, বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে যত্রতত্র পাট জাগ দেওয়ায় পানি পচে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক দিকে যেমন পানি পচে পরিবেশ মারাত্মক দুর্গন্ধময় হচ্ছে, তেমনিভাবে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের ও নিধন ঘটছে। নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ পচা দুর্গন্ধময় পানি ব্যবহার করে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জমি থেকে পাটগাছ কাটার পর তা সরাসরি পানিতে জাগ দেওয়ার পরিবর্তে রিবন নামক মেশিনের মাধ্যমে কাঁচা পাট গাছ থেকে আঁশ ছড়িয়ে তা গাট বেধে মাটিতে গর্ত করে সেগুলো রেখে কিছুটা পানি ও ইউরিয়া প্রয়োগ করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছুদিনের মধ্যে পাটের আঁশ পচে যাওয়ার পরে তা ধুয়ে শুকাতে হয়।
তবে কিছু পাটচাষী বলেছেন তারা এ পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি বিভাগের নিয়োগকৃত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানাননি।
পাটচাষী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি রিবন রেটিং মেশিনে আঁশ ছড়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানলেও ঝামেলাপূর্ণ মনে হওয়ায় আগের পদ্ধতিতে আছেন।
কৃষক সাহেব আলী জানান, নদী খালে বিলে পাট জাগ দেওয়ায় মাছের ক্ষতি হচ্ছে এবং পানি ব্যবহারের ফলে লোকজনের খোস পাঁচড়া ও চুলকানি হচ্ছে। সেই সাথে মশা মাছির বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
মৎস্যজীবী নুর মোহাম্মদ জানান, নদী খালে পাট জাগ দেওয়ায় রুই,কাতলা, পুঁটি, শিং, গড়াই (টাকি)সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠছে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, নদী খাল বিলে পাট জাগ দেওয়া কৃষকদের দীর্ঘদিনের একটি অভ্যাস। কিন্তু এটি পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতির ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে।