মাগুরানিউজ.কমঃ বিশেষ প্রতিবেদক-
আবহমানকাল থেকেই শহর-গ্রাম নির্বিশেষে রমজানের ইফতার পর্বের প্রধান অনুষঙ্গ মুড়ি। এ শুধু পরম্পরা নয়, বাঙালির অনন্য ঐতিহ্য। আর এ ক্ষেত্রে হাতে তৈরী মুড়ির চাহিদা সর্বাধিক। মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সারাবছর ধরেই চলে মুড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞ। রমজান উপলক্ষে সে ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
কেউ মুড়ি তৈরীর জন্য শুকাচ্ছেন চাল। কেউবা মাটির খোলায় চাল গরম করছেন। গরম বালুর স্পর্শে তা মুড়মুড় করে ফুটে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ি। মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামের চিত্র এটি। রমজান উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েক গুণ। এই মুড়িতে নেই কোন রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ। যার কারণে মাগুরার হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা অনেক বেশি।
নিজনান্দুয়ালী গ্রাম ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত মুড়ি তৈরির কাজে। পাইকাররা এখান থেকে মুড়ি কিনে জেলা শহরের বড় বড় দোকানে নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া এই অঞ্চলের মুড়ির কদর এতোই বেশি যে জেলার গণ্ডি পেরিয়ে তা চলে যাচ্ছে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে এই গ্রামের বেশিরভাগ লোক মুড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নারীরা মুড়ি তৈরির জন্য চাল শুকানো থেকে ভাজার কাজ করে থাকেন। আর পুরুষেরা সেসব বিক্রি করতে নিয়ে যান বাজারে।
গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম বললেন, স্বামীর সংসারে যেদিন পা রেখেছি সেদিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি মুড়ি তৈরিতে। ১৫ বছরের অধিক সময় ধরেই মিশে আছি মুড়ি ভাজার কাজে। মুড়ি তৈরি ও বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা পেয়েছি।
ইউনুছ মিয়া নামের এক মুড়ির ব্যবসায়ী বলেন, মুড়ির কদর সব চাইতে বেশি থাকে রমজান মাসে। এই মাসে প্রতিদিনই পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে মুড়ি কিনে তা শহরে বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা যে মুড়ি তৈরি করি তাতে কোন ধরনের ভেজাল নেই। যার কারণে হাতে চাহিদা বেশি।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথাও জানালেন কেউ কেউ। রঞ্জনা বালা বলেন, গ্রামের যাঁদের পুঁজি নেই, তাঁরা অনেকে মহাজনদের সঙ্গে মুড়ি ভেজে দেওয়ার চুক্তি নেন। এ ক্ষেত্রে মহাজনেরা শুধু চাল, লবণ জোগান দেন। বাকি সব উপকরণ গ্রামবাসীকেই দিতে হয়। প্রতি কেজি মুড়ি ভাজার জন্য তাঁরা পান ১০ টাকা। আর মহাজনেরা সেসব মুড়ি বিক্রি করেন প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
শহরের মুড়ি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ বলেন, বাজারে বড় ও ধবধবে সাদা মুড়ির চাহিদা বেশি। তাই অনেক কারিগর লবণের বদলে চালে ইউরিয়া সার ও হাইড্রোজ মিশিয়ে মুড়ি ভাজছেন। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুড়ির আসল স্বাদ। কারখানায় যেসব মুড়ি উৎপাদন করা হয়, তারও বেশির ভাগ ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মিশিয়ে করা হয়।
গ্রামের মোঃ মজনু বিশ্বাস জানালেন, এক সময় নিজনান্দুয়ালী গ্রাম মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল। আগে প্রত্যেকটি বাড়িতে মুড়ি তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আধুনিক মেশিন দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে মুড়ি উৎপাদন করায় এ অঞ্চলের মানুষ হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে গেছে।তারপরও এই গ্রামের বেশিরভাগ মুড়িতে কোন ভেজাল নেই। আর রমজান মাসে ইফতারের জন্য এই মুড়ির চাহিদা বেশি।