শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে চিলিকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল। স্বাগতিকদের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক হুলিও সিজার। প্রতিপক্ষের দুটি শট রুখে দিয়ে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চ তৈরি করে দেন এ গোলরক্ষক। এর আগে নির্ধারিত সময়ে উভয় দলই ১-১ গোলে সমতায় থাকলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু অতিরিক্ত সময়েও কোনো পক্ষ ব্যবধান গড়তে না পারায় পেনাল্টি শুটআউটে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়। পুরো ম্যাচের মতো টাইব্রেকারেও ছিল চরম নাটকীয়তাপূর্ণ।
ডেভিড লুইজের শটটি জালে জড়ালে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। চিলির পক্ষে পিনিলা ও সানচেজের প্রথম দুটি শট ঠেকিয়ে দেন হুলিও সিজার। ব্রাজিলের পক্ষে দ্বিতীয় শট নেয়া উইলিয়ানের শট পোস্ট খুঁজে পায়নি। তবে মার্সেলোর শট জালে জড়ালে ২-০ তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। চিলির পক্ষে ব্যবধান কমিয়ে আনেন অ্যারানগুয়েজ (২-১)। তবে হাল্কের শট চিলি গোলরক্ষক ব্রাভো ঠেকিয়ে দিলে চরম নাটকীয়তা ভর করে ম্যাচে। ডিয়াজের শটে সমতায় ফেরে (২-২) চিলি। এরপর ব্রাজিল ও চিলির ভাগ্য ঝুলে ছিল যথাক্রমে নেইমার ও জারার ওপর। নেইমারের শট ‘ঘর’ খুঁজে পেলেও পোস্টে শট নিয়ে চিলির স্বপ্ন ভেঙে দেন জারা। বেলো হরিজন্তের স্তাদিও মিনেইরাও স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দুই লাতিন প্রতিপক্ষের ম্যাচটি শুরু দারুণ প্রাণবন্ত। অ্যাটাকিং ফুটবলে প্রতিপক্ষকে দারুণ ব্যতিব্যস্ত রাখে কোচ স্কোলারির শিষ্যরা।
বিশেষ করে নেইমার ছিল দারুণ। ফলে শুরু থেকেই চিলির পোস্টে একের পর এক আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ে। গোল পেতেও বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়নি তাদের। ১৮ মিনিটে সেট পিস থেকে প্রথম গোল আদায় করে স্বাগতিকরা। বামপ্রান্ত থেকে নেইমারের কর্নার কিকে বক্সে হেড নিয়েছিলেন থিয়েগো সিলভা, বল পেয়ে যান ডেভিড লুইজ, যাকে পাহারায় রেখেছিলেন জারা। চিলিয়ান এ ডিফেন্ডারের পা থেকেই বল জালে প্রবেশ করলে উল্লাসে ফেটে পড়ে মিনেইরাও। গোলশোধে পাল্টা আক্রমণের প্রয়াস চালাতে থাকে চিলিও। তবে খুব কমই প্রতিপক্ষের ডি-বক্স পর্যন্ত বল টেনে নিতে পেরেছে কোচ জর্জ সাম্পাওলির শিষ্যরা। ২৯ মিনিটে শক্ত ট্যাকলের মুখে পড়েন নেইমার।
বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বিপদসীমার দিকে বাউন্সিং বল নিয়ে আগুয়ান এ স্ট্রাইকারকে সামনে থেকে বাধা দেন ডিফেন্ডার ভিদাল। ধাক্কা সামলাতে না পেরে উড়ে গিয়ে ছিটকে পড়েন ২২ বয়সী ব্রাজিল তারকা। খেলার ধারার বিপরীতে ৩২ মিনিটে গোল করে চিলিকে সমতায় ফেরান অ্যালেক্সিস সানচেজ। ডানপ্রান্ত থেকে ভারজাসের বানিয়ে দেয়া বলে নিখুঁত ফিনিশিং দেন সানজেন। হালকা শটে বাম পোস্ট দিয়ে জাল কাঁপান।
ব্রাজিল গোলরক্ষক হুলিও সিজারের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। ৪০ মিনিটে দারুণ সুযোগ হারায় ব্রাজিল। কড়া মার্কিংয়ে থাকা নেইমার বল বানিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রেডকে। বক্স থেকে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠাতে ব্যর্থ হন ফ্রেড, উড়িয়ে মারেন বাইরে। শেষ পাঁচ মিনিটে প্রতিপক্ষকে ভীষণ চাপে রেখেও গোল আদায়ে ব্যর্থ হন সেলেসাওরা। ৫৫ মিনিটে রেফারি ওয়েবের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে গোলবঞ্চিত হয় ব্রাজিল। সতীর্থের ভাসিয়ে দেয়া বল ডানবাহু দিয়ে আয়ত্তে নিয়ে নিচু শটে বল জালে পাঠিয়েছিলেন হাল্ক। কিন্তু রেফারি আগেই হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজান। গোল উদযাপনের জন্য হলুদ কার্ড দেখান ব্রাজিল ফরোয়ার্ডকে।
যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় সেটি হ্যান্ডবল ছিল না! দশ মিনিট পরেই গোলহজম থেকে বেঁচে যায় স্বাগতিকরা। দুই জুভেন্টাস সতীর্থ ইসলা ও ভিদাল বল বিনিময় করে ব্রাজিলের বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন। ইসলা বুদ্ধিদীপ্ত মাইনাসে বল পান অ্যারানগুয়েজ। বক্স থেকে অ্যারানগুয়েজের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন সিজার।
ম্যাচের শেষ দিকে মুর্হুমুহু আক্রমণ গড়ে তোলেন হাল্ক, নেইমার, জোরা। একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন তারা। ৮৪ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে ব্রাজিলের। পেনাল্টি এলাকা থেকে ডানপায়ে হাল্কের জোরালো শট অসাধারণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন চিলি গোলরক্ষক ব্রাভো। শেষদিকে দুর্দান্ত সব সেভে দলকে গোলহজম থেকে বাঁচিয়ে দেন। নির্ধারিত সময়ে কোনো পক্ষই গোল না পেলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা। প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করলেও রক্ষণদুর্গ ভেদ করে গোলমুখ খুলতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। হাল্ক, অস্কার, জো ও নেইমারের একের পর এক প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ায় পেনাল্টি শুটআউটের দিকেই গড়ায় ম্যাচ। তবে শেষ দুই মিনিটে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা তৈরি হয়। সানচেজের বানিয়ে দেয়া বলে পিনিলার শট ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হওয়ায় বড় বাঁচা বেঁচে যায় স্বাগতিকরা