মাগুরানিউজ.কমঃ
মাগুরার মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের ইতিহাসে আজকের দিনটি বড়ই শোকাবহ। এই দিনে মহম্মদপুর উপজেলা সদরে সংগঠিত রাজাকারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন আহম্মদ হোসেন ও মহম্মদ হোসেন নামে দুই সহোদর। এ ছাড়া মহম্মদ আলী নামের আরো এক ইপিআর সদস্য ওই যুদ্ধে শাহাদৎ বরণ করেন।
মহম্মদপুর উপজেলার নাগড়িপাড়া গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে আহম্মদ ও মহম্মদ। ইপিআরের মহম্মদ আলী যশোরের রূপদিয়ার বাসিন্দা।
১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর ছিল ঈদুল ফিতরের আগের দিন শুক্রবার। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ওই যুদ্ধ ‘মহম্মদপুর যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
মহম্মদপুর টি.টি.ডি.সি. হল বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ভবনে রাজাকারদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯ নভেম্বর গভীর রাতে উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ঝামা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হন। ভোর রাতে তারা চারদিক দিয়ে ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ইয়াকুব, কমল সিদ্দিকী, নূর মোস্তফা এবং আবুল খায়েরের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের চারটি দল রাজাকারদের ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আহম্মদ হোসেন। একই সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন বড় ভাই মহম্মদ হোসেন। গুলিবিদ্ধ ছোট ভাইকে উদ্ধার করতে এসে তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। শহীদ হন দুই সহোদর । ওই যুদ্ধে মহম্মদ আলী নামের যশোরের এক বীর যোদ্ধাও শাহাদৎ বরণ করেন।
আহম্মদ-মহম্মদ দুই ভাই উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। আহম্মদ হোসেন স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুর করেন। ৭১ সালে তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ শত্রুমুক্ত করতে অসামান্য অবদান রাখেন।
মহম্মদপুরের কাশিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. তিলাম হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দুই সহোদরের আত্মদানের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। তবে তাদের এই ত্যাগ দেশেকে শত্রুমুক্ত করতে প্রেরণা যুগিয়েছিল।
মহম্মদপুর উপজলা পরিষদের উদ্যোগে শহীদ সহোদরের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদদের পরিবারের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার নিজ গ্রাম নাগড়িপাড়ায় আলোচনা, কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।