মাগুরানিউজ.কম:
এখন সময় একদম হাতে গোনা; আর কিছুক্ষণ পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গত মাসের ১২ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে ব্রাজিলের সাও পাওলো ভেনুত্যে গড়িয়েছিল ৩২ দলের অংশগ্রহণে ২০তম বিশ্বকাপ ফুটবল
আসরের প্রথম ম্যাচ। সময়ের তালে তাল মিলিয়ে এখন আমরা এই মহাযজ্ঞের শেষ ম্যাচের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। যেটি হচ্ছে স্বপ্নের ফাইনাল ম্যাচ। বুধবার রাতে সাও পাওলোতে সাবেলার শিষ্যরা টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হল্যান্ডকে পরাজিত করে। এখন জীবন্ত কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসির হাতে স্বপ্নপূরণের আর মাত্র ৯০ মিনিট দূরে আর্জেন্টিনা। তবে ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪ এর আজকে অনুষ্ঠিতব্য ৬৪তম ম্যাচটিকে ঘিরে যত উত্তেজনা বিরাজমান। স্বাগতিক ব্রাজিলকে এক প্রকার পাঁড়ার ফুটবল দলে নামিয়ে আনা ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি জার্মানীর সাথে ফাইনালে মুখোমূখি হবে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা আলোচিত তারকা লিউনেল মেসির আর্জেন্টিনা। আগের দিন হিটলারের এই বাহিনী আয়োজক ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ওঠে। ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য ত্রিপল প্রতিশোধেরও।
গতবার আফ্রিকা বিশ্বকাপে কোচ ম্যারাডোনার নেতৃত্বে দারুণ খেলছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম পর্ব ভালোভাবে পার করে। কিন্তু নকআউট পর্বে গিয়ে এই জার্মানির কাছে ৪-০ ব্যবধানে হেরে যায়। কোনো প্রতিরোধই সেদিন গড়তে পারেননি মেসিরা। এর আগের বিশ্বকাপেও এই জার্মানির কাছে হেরে তারা বিদায় হয়। সেবারের চোখের পানি মেসি এবার সুদে-আসলে শোধ করতে চাইবেন! আবার এই ম্যাচকে ফাইনালের প্রতিশোধও বলা যায়। কারণ শেষ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ছিল এই জার্মানি। শেষদিকে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পেলে একমাত্র গোলে ম্যারাডোনার চোখের পানি ঝরান হিটলারের বাহিনী। এবার সেটিরও শোধ কড়ায়গন্ডায় নিতে চাইবে আর্জেন্টিনা। কারণ ২৪ বছর ধরে ক্ষোভ চেপে বসে আছে তারা। ১৯৮৬ ও ৯০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন দলে ছিল ম্যারাডোনা, আর ২০১৪ এর ফাইনালের দলে আছেন ভিনগ্রহের ফুটবলার মেসি।
অন্যদিকে, সেমি-ফাইনালে আয়োজকদের লজ্জায় ডুবিয়ে ৭-১ গোলে জয় নিয়ে দারুণ উজ্জীবিত জার্মানি। ১৯৯০ সালের পর ২০০২ এ ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনাল খেললেও শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা। ওই ম্যাচে জার্মানরা ০-২ গোলে হেরেছিল। ইতিহাস বলে জার্মানরাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। তারাও ১৯৮৬ বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। তাদের একক মেসি না থাকলেও আছেন এক ঝাঁক মুলার, ওজিল, শোয়েনস্টেইনগার, ক্লোসা। জার্মানি এ পর্যন্ত ফাইনাল খেলেছে সাতবার। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তিনবার ও রানার্সআপ চারবার। তাই ফুটবলের সব অর্জন পায়ে মাখানো মেসি কী পারবেন অধরা এই ট্রফি জিতে আরেকজন পেলে কিংবা ম্যারাডোনা অথবা তাদেরও ছাড়িয়ে যেতে?
কিন্তু সবার মনের কোণে স্বপ্ন ছিল অল লাতিন ফাইনাল দেখা, অর্থাৎ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার স্বপ্নের ফাইনাল উপভোগ করা। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের অমার্জনীয় ব্যর্থতায়। কিন্তু আরেক সেমিতে হল্যান্ডকে ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে কুপোকাত করে ঠিকই ফাইনালের রঙিন মঞ্চে আসীন হয়েছে আর্জেন্টিনা। এর ফলে আজ রাতে ২০তম বিশ্বকাপের শিরোপানির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি ও আর্জেন্টিনা। অর্থাৎ আরেকবার ফুটবলবিশ্ব দেখতে যাচ্ছে লাতিন ও ইউরোপের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। তবে এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে সম্ভাবনার দুয়ার খোলা ছিল অল ইউরোপ বা অল লাতিন ফাইনালের। আর যদি অল লাতিন ফাইনালই খেলতো সেটা হলে ৮৪ বছরের বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার স্বপ্নের ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। প্রথম সেমিতে ব্রাজিল হার মানায় অল ইউরোপ ফাইনালের সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সেমিতে হল্যান্ড আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারলেই আমেরিকায় প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত হতো ইউরোপের।
হিসেব মতে এ পর্যন্ত লাতিন-ইউরোপ ফাইনাল হয়েছে ৯ বার। এতে জয়ের পাল্লা ভারি লাতিনের। এই অঞ্চলের দেশগুলো মুখোমুখি লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৭বার। ইউরোপীয় দল শেষ হাসি হেসেছে মাত্র ২বার। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৭৮, ১৯৮৬, ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপে ইউরোপের দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় লাতিন অঞ্চলের দেশ। আর ইউরোপের দেশ চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯০ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে। সঙ্গত কারণে এবার ব্রাজিলের মাটিতে শিরোপা জয়ে এগিয়ে থাকছে আর্জেন্টিনা। এছাড়া অনেকেই মনে করছেন জার্মানি আসলে তাদের শেষ ভালো খেলাটা সমাপ্ত করেছে এবারের প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সাথে।