মাগুরানিউজ.কমঃ
‘পরানের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে/ কত কষ্ট কইরা আমি, কামাই রোজগার করে আনি/ মাথার ঘাম পায়ে ফেলি/ তবু দুঃখ গেলো না রে/ বুড়ি হইলাম তোর কারণে।
কাঙালিনী সুফিয়ার বিখ্যাত এই গানের মতোই মাগুরার নারী শ্রমিকদের অবস্থা।
পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমান শ্রম দেন । নেই শ্রমের স্বীকৃতি। আছে মুজুরি বৈষম্য। শ্রমের অর্থ পরিবারের প্রধান স্বামীর হাতে তুলে দেন। তারপরও নেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। ঘটা করে পালিত হয় দিবস। নারীদের উন্নয়ন নিয়ে বক্তারা ধোয়া তোলেন। বাস্তবতা হচ্ছে দুস্থ ও শ্রমিক নারীদের প্রকৃত উন্নয়নে নেই কোন বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ।
জানা গেছে, মাগুরা সদর ও তিনটি উপজেলা মহম্মদপুর, শালিখা ও শ্রীপুরে প্রায় তিন লাখ নারী রয়েছেন। যারা সরাসরি শ্রমিকের কাজ করেন। গৃহকর্ম, কৃষিকাজ, নির্মাণকাজ ও চালকলে এসব নারী শ্রমিক শ্রম বিক্রি করেন।
কম মজুরির কারণে এসব শ্রমিকের চাহিদা বেশি। এছাড়া স্বামীর সংসারে নারীর নিবীড় শ্রমের কোন মূল্য নেই।
দেখা গেছে, কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি নারী। সামাজিক রীতি অনুযায়ী মাঠের সব কাজ করেন পুরুষ কৃষক আর বাড়ির কাজ করেন কৃষাণি অর্থাৎ নারীরা।
কাক ডাকা ভোরে শুরু, গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাড়াই। পুরুষ কৃষকেরা মাঠ থেকে ফসল বাড়ি পৌছে দিয়েই দায়িত্ব শেষ । বাকি কাজ করতে হয় নারীদের। অথচ ফসল বিক্রির টাকায় কৃষক বধুর অধিকার থাকে কমই।
শ্রীপুরের নাকোল ইউনিয়নের মাজআইল গ্রামের কৃষাণি সালেহা বেগম (৩৫)। তার স্বামী আজিজার রহমান মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন কৃষক। তিনি আমন মৌসুমে প্রায় একশ মণ ধান পাবেন বলে আশা করেন।
সালেহা জানান, পুরো ধান মাড়াই ও সংরক্ষণের কাজ তার নেতৃত্বে হয়ে থাকে। দুইজন নারী তাকে সহযোগিতা করলেও সার্বক্ষণিক তাকে শ্রম দিতে হয়।
এই কৃষকবধুর সারাদিনের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠেন। নামাজ পড়ে কাজে লেগে যান। ঘর গোছানো। বাসনকোসন পরিস্কার করে ছয়টা বাজলে সকালের খাবার তৈরি করেন। সকালের খাবারের পর ছেলে মেয়েরা স্কুলে, তার স্বামী যায় মাঠে।
তারপর শুরু করেন ধান মাড়াইয়ের কাজ। ধানের মৌসুমে কাজের চাপে দুপুরে তেমন রান্না হয় না। সকালের বেচে যাওয়া খাবার খাওয়া হয় দুপুরে। সন্ধ্যায় রান্না হয় রাতের খাবার। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও তিনি কাজ করেন গভীর রাত পর্যন্ত। শুধু সালেহা নন মাগুরার প্রায় তিন লাখ গ্রামীণ নারীদের প্রতিদিনের কাজের তালিকা প্রায় এমনি।
নির্মাণ শ্রমিক মরিয়ম বেগম (৪১)। তিনি দিন কাজ করে পান দুইশ টাকা। একই কাজের পুরুষ শ্রমিক পান ২৫০ টাকা। দিন শেষে সব টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেন তিনি।
চাল কলের শ্রমিক রাহিলা বেগম (৫০) বলেন, ‘সারা দিন পরিশ্রম করে ১৫০ টাকা পান । তা-ও অনিয়মিত। তিনিও পারিশ্রমিক ছেলের হাতে তুলে দেন।’
মহম্মদপুর সদরের গৃহবধু মনোয়ারা বেগম জানান, স্বামী সংসার ও সন্তানদের উন্নতির জন্য নারীরা কাজ করেন। এজন্য আলাদা পারিশ্রমিকের বিষয়টি তাদের কাছে গৌণ। তারপরও নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মোখলেচুর রহমান বলেন, বিপুল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনে জেলায় নারীদের অবদান অপরীসিম।’